সকালে বারবার কাশি হওয়া কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

রাতের ঘুমের পর অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাশতে শুরু করেন। কারও শুকনো কাশি, কারও আবার কফসহ। অনেক সময় এই কাশি কয়েক মিনিট পর কমে যায়, আবার কারও ক্ষেত্রে দিনভর লেগে থাকে। মূলত ঘুমের সময় গলা ও ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা বা অন্যান্য উত্তেজক উপাদান সকালে শরীর সক্রিয় হওয়ার পরই বের হতে চায়, আর তখনই শুরু হয় কাশির দমক। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটি গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ নয়, তবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সকালে কাশির ৮টি সম্ভাব্য কারণ, উপসর্গ ও করণীয়—
১. সর্দি-কাশি: সর্দির অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী ভেজা কাশি। রাতে শ্লেষ্মা জমে সকালে কাশি বেড়ে যেতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ: গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া।
সমাধান: গরম চা বা মধু-মিশ্রিত পানি পান, ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ যেমন ডিকনজেস্ট্যান্ট বা কাশির সিরাপ, স্যালাইন নাকের স্প্রে, স্টিম ইনহেলেশন।
২. অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ: সর্দি ছাড়াও ফ্লু, নিউমোনিয়া, সাইনোসাইটিস, ব্রংকাইটিস, টনসিলাইটিস বা কোভিড-১৯ থেকেও সকালের কাশি হতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ: জ্বর, ক্লান্তি, হাঁচি, গলা ব্যথা, বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট।
সমাধান: সর্দির মতো একই ধরনের চিকিৎসা, প্রয়োজনে অ্যান্টিভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক।
৩. অ্যালার্জি: ধুলা, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর লোম বা ডাস্ট মাইটসের অ্যালার্জি সকালে কাশি বাড়িয়ে দেয়।
অন্যান্য উপসর্গ: নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ, শুকনো কাশি, চোখে পানি, শ্বাসকষ্ট।
সমাধান: অ্যান্টিহিস্টামিন, কর্টিকোস্টেরয়েড স্প্রে, ডিকনজেস্ট্যান্ট, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা।
৪. পোস্টনেজাল ড্রিপ: নাকের অতিরিক্ত শ্লেষ্মা গলার পেছনে জমে গড়িয়ে পড়লে কাশি হয়, যা রাতে বেশি হয় এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ: গলা পরিষ্কার করার প্রবণতা, গলা ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস।
সমাধান: স্যালাইন স্প্রে বা নেটি পট, ডিকনজেস্ট্যান্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন, প্রচুর পানি পান।
৫. হাঁপানি: হাঁপানির রোগীরা অনেক সময় রাতে বা ভোরে বেশি কাশেন। কাশি-ভিত্তিক হাঁপানি হলে শুধুমাত্র কাশিই মূল উপসর্গ হতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ: শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ, শোঁ শোঁ শব্দ।
সমাধান: ইনহেলার, ব্রঙ্কোডাইলেটর, কর্টিকোস্টেরয়েড, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ।
৬. ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ: ধূমপানজনিত দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগে সকালে ভেজা কাশি বেশি হয়।
অন্যান্য উপসর্গ: শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া, ক্লান্তি, বুকে চাপ।
সমাধান: ধূমপান বন্ধ করা, ব্রঙ্কোডাইলেটর, অক্সিজেন থেরাপি, প্রয়োজনে সার্জারি।
৭. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী কাশির প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এর পেছনে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ দায়ী। এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড বারবার খাদ্যনালিতে (ইসোফেগাস) উঠে আসে।
অন্যান্য উপসর্গ: হার্টবার্ন, বুকে জ্বালা, গিলতে কষ্ট, গলায় দলা লাগা অনুভূতি।
সমাধান: অ্যান্টাসিড, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর, এইচ-২ ব্লকার, প্রয়োজনে সার্জারি।
৮. সাইনাস ইনফেকশন: যদি দীর্ঘ সময় ধরে নাক বন্ধ থাকা ও কাশি চলতে থাকে, তাহলে এটি সাইনোসাইটিস বা সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। সাইনাস হলো আমাদের নাকের চারপাশের হাড়ের ভেতরে থাকা বায়ুভর্তি ফাঁপা স্থান, যা মিউকাস বা শ্লেষ্মা তৈরি করে নাককে আর্দ্র রাখে এবং ধুলা, জীবাণু ইত্যাদি আটকাতে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপসর্গ: পোস্টনেজাল ড্রিপ, জ্বর, সবুজ বা হলুদ রঙের শ্লেষ্মা, মুখে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া।
সমাধান: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন স্প্রে, স্টিম ইনহেলেশন, গরম সেঁক।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: নিচের উপসর্গগুলোর যেকোনোটি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—
> কাশি ২-৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে
> জ্বর
> সবুজ/হলুদ শ্লেষ্মা
> শ্বাসকষ্ট বা শোঁ শোঁ শব্দ
> অজানা কারণে ওজন কমা
> গোড়ালিতে ফোলা
সকালের কাশি অনেক সময় সাধারণ সর্দি বা ধুলাবালির অ্যালার্জির কারণে হয়, যা সহজ যত্নেই কমে যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে বা অন্য উপসর্গ যুক্ত হলে এটি ফুসফুস, গলা কিংবা পাচনতন্ত্রের গুরুতর সমস্যার সংকেত হতে পারে। তাই নিজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments