এক মাস ভাত-রুটি বাদ দিলে নিজের যে পরিবর্তন দেখবেন

বর্তমানে অনেকেই ওজন কমানো ও স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে চাল ও রুটি খাওয়া বন্ধ করছেন। এই দুই প্রধান কার্বোহাইড্রেট উৎস বাদ দিলে শরীরে নানা ধরণের পরিবর্তন দেখা যায় কিছু ইতিবাচক, কিছু আবার সতর্কতা অবলম্বনযোগ্য। আপনি যদি ৩০ দিনের জন্য ভাত ও রুটি বাদ দিতে চান, জেনে নিন এতে আপনার শরীরে কী কী ঘটতে পারে।
১. শরীরের চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে শুরু করে
ভাত-রুটির মতো প্রধান কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে শরীর বিকল্প শক্তির উৎস খোঁজে সেটা হয় চর্বি। এই প্রক্রিয়াকে বলে 'কিটোসিস'। শুরুতে একটু ক্লান্ত লাগতে পারে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই অনেকেই বলেন যে তাদের শক্তি অনেক স্থায়ী হয় এবং খাবারের পর ক্লান্তি কমে।
২. ওজন কমে
প্রথম সপ্তাহে ১–২ কেজি ওজন কমে যেতে পারে, তবে এর বেশিরভাগই পানি। কারণ কার্বোহাইড্রেট শরীরে পানি ধরে রাখে। যদিও এটা সাময়িক, তবুও ওজন কমার এই প্রাথমিক ধাপ অনেককে উৎসাহ দেয়।
৩. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আসে
ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে সাদা ভাত বা পরিশোধিত গম বাদ দিয়ে বার্লি, ওটস বা মিলেটের মতো কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত শস্য খাওয়া উপকারি হতে পারে।
৪. হজমে পরিবর্তন
অনেকে ভাত ও রুটি বাদ দিলে হালকা ও কম ফুলে থাকার অনুভূতি পান। তবে যদি আপনি পর্যাপ্ত আঁশজাতীয় খাবার না খান (যেমন: সবজি, বীজ), তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই ভারসাম্য রক্ষা জরুরি।
৫. প্রচণ্ড খিদে ও খাদ্যচাহিদা ফিরে আসতে পারে
ভাত-রুটি অনেকের জন্য মানসিক সান্ত্বনা দেয়। হঠাৎ বাদ দিলে, বিশেষ করে চাপের সময় বা শীতকালে, মনের মধ্যে তীব্র চাহিদা তৈরি হতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে মিষ্টি আলু, দই-মুড়ি, ফল খান।
৬. পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে
ভাত ও রুটি থেকে ভিটামিন বি, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায়। তাই এগুলো বাদ দিলে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি রাগি, জোয়ার, আমরান্থ বা মাল্টিগ্রেইন আটা দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করছেন।
৭. নিজের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হবেন
৩০ দিন ভাত-রুটি বাদ দিলে অনেকেই বুঝতে পারেন, তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এগুলোর উপর কতটা নির্ভরশীল ছিলেন। এটি এক ধরনের 'মাইন্ডফুল ইটিং'-এর শিক্ষা দেয়।
ভাত-রুটি কি পুরোপুরি বাদ দেয়া উচিত?
একেবারেই না। লক্ষ্য হওয়া উচিত বুঝে খাওয়া। কার্বোহাইড্রেট আমাদের শক্তি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনীয়। কিন্তু পরিশোধিত (refined) কার্ব বাদ দিয়ে পুরো শস্য (whole grains) বেছে নেওয়া উচিত:
* সাদা চালের বদলে ব্রাউন রাইস, আতপ চাল, হাতের কুটা চাল
* সাধারণ আটার বদলে মাল্টিগ্রেইন, রাগি বা জোয়ারের আটা
* সঙ্গে প্রোটিন (ডাল, পনির, ডিম, মাছ) ও সবজি রাখুন
এভাবে খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেট ভরা থাকে এবং শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। চাল ও রুটির বিকল্প যা আপনি ট্রাই করতে পারেন:
* মিলেট (রাগি, জোয়ার, বাজরা) – ফাইবার ও খনিজে সমৃদ্ধ।
* কুইনোয়া, বাকউইট, ডালিয়া – পুষ্টিকর ও পেট ভরানো।
* ফুলকপির ভাত বা মিলেটের রুটি – কম কার্বের স্মার্ট বিকল্প।
* সবজি ভাজি, ডাল, শাকসবজি – স্বাদেও পরিপূর্ণ, পুষ্টিতেও
চাল ও রুটি ছাড়াই ৩০ দিন পার করা এক ধরনের খাদ্য অভ্যাসের রিসেট। এটি ওজন কমানো, শক্তি বাড়ানো ও খাবার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার একটি সুযোগ। তবে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে চাইলে খাদ্য তালিকাকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে। কার্বসকে ভয় নয়, বরং বুঝে-শুনে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Comments