অফিসের চেয়ারে তোয়ালে রাখা হয় কেন?

বেশিরভাগ অফিসেই খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিটি চেয়ারে একটি করে তোয়ালে রাখা আছে। এটি বিদেশি সংস্কৃতি। তবে দেশি বা বিদেশি যাই হোক না কেন, অফিসে এমন ব্যবস্থা রাখার প্রথা কেন চালু করা হলো–কখনো কি ভেবে দেখেছেন?
অফিসের চেয়ারে তোয়ালে রাখার এই সংস্কৃতিটি কোনো বিদেশি সংস্কৃতি কিংবা কীভাবেই-বা ওই সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতিতে চলে এলো–এসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই মনে উঁকি দিচ্ছে তাই না!
পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকেই ব্যবসা না করে কর্মজীবন শুরু করেন অফিসের চার দেয়ালে। যারা এখনও অফিশিয়াল জীবনে প্রবেশ করেননি, তারা বাবা, মা, ভাই, বোনদের কাউকে না কাউকে অবশ্যই যেতে দেখেছেন অফিসে। এই অফিসের একটি সংস্কৃতি আছে। আর তা হলো, অফিসের চেয়ারে তোয়ালে রাখার ব্যবস্থা।
এটি মূলত একটি ব্রিটিশ সংস্কৃতি। ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ রাজত্ব করত, তখন এই সংস্কৃতি ভারত ও বাংলাদেশে চালু করে। অফিসের চেয়ারে তোয়ালে চালু করার অবশ্য একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। আর সেটি হলো ব্রিটিশ শাসনের সময় যারা পড়াশোনার পাশাপাশি ইংরেজিটাও শিখে নিয়েছে, তারা যখন উচ্চ পদে নিয়োগ পেতে শুরু করে, তখন ব্রিটিশরা একটি অসংগতি লক্ষ করে।
আর তা হলো, কলকাতা আর বাঙালি বাবুরা অফিসে আসার সময় মাথায় বেশি করে তেল দিয়ে আসত। এই তেল এতই বেশি যে যখন কলকাতা আর বাঙালি বাবুরা ক্লান্তিতে চেয়ারে গা এলিয়ে দিত তখন ব্রিটিশদের মাথায় এ চিন্তা ভর করে যে তাদের দামি চেয়ারগুলো তেলে অপরিষ্কার এবং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তখন ব্রিটিশরা বাবুদের জন্য অর্ডার দিল 'প্রতিটি চেয়ারে লাগাও তোয়ালে।' এ সিস্টেমে চেয়ার নষ্ট হবে না; বরং তোয়ালে অপরিষ্কার হবে। এতে কোনো বিপত্তি নেই। আবার তোয়ালে ধুয়ে নেয়া যাবে। অফিসের চেয়ারে তোয়ালে রাখার আরও একটি কারণ আছে। আর তা হলো, গরমের সময় অফিসের সব কর্মীরই ঘাম ঝরত, তা মুছে ফেলার জন্যও তোয়ালের দরকার ছিল।
ব্রিটিশের রাজত্ব শেষ হয়েছে সেই কবেই! তবে এখনও সে রীতি অনেক অফিস মেনে চলছে। বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য দেশ হিসেবে খ্যাত ব্রিটিশ এই সংস্কৃতি চালু করলেও তাদের দেশের অফিসে কিন্তু চেয়ারে তোয়ালে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, মাথায় তেল দেয়া তাদের রীতিবিরুদ্ধ। এ ছাড়া তাদের জন্য অতীতে সারাক্ষণই থাকত টানাপাখার ব্যবস্থা। আর এখন রয়েছে এসি সিস্টেম।
Comments