চ্যাটজিপিটি কি সত্যিই চিন্তার ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে? কী বলছেন গবেষকরা

চ্যাটজিপিটি আসার প্রায় তিন বছর পরেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলছেই। এটি কি ব্যক্তিগত শিক্ষায় সহায়ক একটি উপকরণ, নাকি একধরনের 'আধুনিক অসদুপায়'? এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে এআই ব্যবহারে কি মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির একদল গবেষক 'ইওর ব্রেন অন চ্যাটজিপিটি: অ্যাকিউম্যুলেশন অব কগনিটিভ ডেট হোয়েন ইউজিং অ্যান এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর এসে রাইটিং টাস্ক' নামের একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। এ গবেষণা ধরে ২৩ জুন অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন করেছে দ্য কনভারসেশন।
এমআইটি গবেষণার দাবি: বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি
এমআইটি গবেষকরা দাবি করেছেন, চ্যাটজিপিটি দিয়ে লেখায় মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কমে যায় এবং এর ফলে তৈরি হয় একধরনের 'কগনিটিভ ডেবথ' বা 'বুদ্ধিবৃত্তিক ঋণ'। তারা বলেন, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে শিখন-ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ককে চার মাস ধরে তিনটি ভিন্ন উপায়ে প্রবন্ধ লিখতে বলা হয় নিজের চিন্তা দিয়ে, সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে, এবং এআই দিয়ে। গবেষকেরা তাদের মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ ও লেখার ভাষাগত বিশ্লেষণ করে দেখেন, যারা এআই ব্যবহার করেছেন তাদের 'কগনিটিভ এনগেজমেন্ট' বা মানসিক সম্পৃক্ততা ছিল সবচেয়ে কম।
এমনকি, যারা প্রথমে এআই ব্যবহার করেছিলেন এবং পরে নিজেরা লিখলেন, তারাও মস্তিষ্কের সক্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। গবেষকদের মতে, এআই ব্যবহারে তারা যেন 'চিন্তার ঋণ'-এ পড়ে গিয়েছেন।
তবে ফলাফল কি এতটাই চূড়ান্ত?
এমআইটি গবেষণার এই দাবির বিরোধিতাও রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ফলাফল গবেষণার কাঠামোর কারণে হতে পারে, এআই ব্যবহারের কারণে নয়।
যারা প্রথম থেকেই 'ব্রেইন-অনলি' পদ্ধতিতে লিখেছেন, তারা প্রতিবার একি কাজ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এটি 'ফ্যামিলিয়ারাইজেশন ইফেক্ট' নামে পরিচিত। আর যারা এআই থেকে হঠাৎ নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহারে এসেছেন, তারা সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাননি।
তাছাড়া চতুর্থ প্রবন্ধে এআই ব্যবহারের ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রথমে নিজে লিখেছেন তারা এআই ব্যবহার অনেক বেশি কৌশলীভাবে করেছেন, কারণ তারা আগের লেখা ভালোভাবে মনে রেখেছিলেন। অন্যদিকে এআই ব্যবহারকারীরা প্রথমে যতটা অংশ নিজেরা ভেবেছেন, ততটাই মূলত এআই-এর উপর নির্ভর করেছেন।
শিক্ষায় এআই ব্যবহারের আসল শিক্ষা কী?
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এআই নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং শিক্ষাব্যবস্থায় এআই ব্যবহারযোগ্যতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মানও বাড়াতে হবে যেমনটা ১৯৭০ এর দশকে ক্যালকুলেটরের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আরও জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হতো।
বর্তমানে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও এআই-কে উপেক্ষা করে পুরনো ধাঁচে শিক্ষাদান করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় 'চিন্তার কষ্ট' এড়িয়ে শুধু উত্তর পাওয়ার জন্য এআই-এর উপর নির্ভর করে ফেলছে। একে বলা যায় "মেটাকগনিটিভ লেজিনেস"।
কীভাবে এআই ব্যবহার করতে হয় তা শিখুন
এআই যুগে শিক্ষা মানে কেবল রচনা বা গণনা নয়। এখন শিখতে হবে—কোন কাজে এআই ব্যবহার উপযোগী এবং কোন কাজে নিজস্ব চিন্তা অপরিহার্য। কোন কাজ 'অফলোড' করা যায়, আর কোন কাজের জন্য চাই প্রকৃত সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণ।
চ্যাটজিপিটি বা এআই যদি সঠিকভাবে, সঠিক পরিবেশে ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি মস্তিষ্ককে নিঃসন্দেহে শাণিত করতেও পারে। তবে তা শর্তসাপেক্ষ: শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি চ্যালেঞ্জ করার মতো কাঠামো থাকা চাই।
Comments