প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত হওয়া উচিত: আনিস আলমগীর

প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত হওয়াই উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর। বিচারপতিরাও বিচারযোগ্য—এই সংস্কৃতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতেই হবে বলে জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবারর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
আনিস আলমগীর তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, 'দেশের হাজার হাজার মানুষের রক্ত, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা—যা ছিল নির্বাচনকে নিরপেক্ষ রাখার একমাত্র সংবিধানসম্মত পথ।
সেই ব্যবস্থাকে একটি রায়ে বাতিল করে দিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার বীজ বপন করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এটিই তার প্রাপ্য। বিচারপতি মানেই অপ্রতিস্পর্ধিত কেউ নন। বিচারপতিরাও বিচারযোগ্য—এই সংস্কৃতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতেই হবে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে আটক করেছে। তিনি দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রধান কারিগর হিসেবেই পরে তাকে পুরস্কারস্বরূপ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। সেই পদে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বহাল ছিলেন।
আনিস আলমগীর বলেন, "এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি খুশি হতাম যদি আরেক বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হতো। বিচার বিভাগে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এই সিনহা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদেশে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে 'সততার মুখোশ' পরে আছেন। অথচ সত্য হলো—তার বিচারপতি হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতাও ছিল না। ২০১৭ সালের এই সময়ে তার সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক চরমে পৌঁছায়। অথচ তাকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়োগ দিয়েছিলেন যোগ্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে, শুধুমাত্র 'অনুগত' এবং 'হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত' ভেবে।
প্রধানমন্ত্রী তখন বোঝেননি, যে ব্যক্তি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারেন, তার কাছে অনুগত্য আশা করা কতটা অমূলক।"
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য এই যে—তার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন প্রধান বিচারপতিকেই লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। এস কে সিনহাকে তিনি সরাসরি বিদায় দেন, অপরজন খায়রুল হক ছাত্র-জনতার চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার প্রধান ড. ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণকে বৈধতা দিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে। তার আসল উত্থান হয়েছিল শেখ হাসিনার হাত ধরেই। হাসান ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা—এই পরিচয়ই তাকে যোগ্যতার চেয়ে অগ্রাধিকার এনে দেয়।
এমনকি ২৪ জুলাইয়ের কোটা সংস্কারের তুমুল আন্দোলনের মধ্যেও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনাবাসীর সংবর্ধনায় অংশ নেন, অথচ হাজার হাজার আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবিকে তিনি গুরুত্ব দেননি। রাজনীতিকদের মতো বক্তৃতা করেছেন, কিন্তু উচ্চ আদালতের কর্তা হিসেবে ন্যূনতম সংবেদনশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ছাত্রদের বক্তব্য শুনে শুনানি নির্ধারণ না করে বরং দূরত্ব বজায় রেখেছেন। তারিখের পর তারিখ দিয়ে শেখ হাসিনার পতন ত্বরান্বিত করেছেন, যোগ করেন আনিস আলমগীর।
তিনি আরো বলেন, 'সবশেষে বলতে চাই—বিচারপতির চেয়ারে বসা মানেই দায়মুক্তি নয়। তারা যদি রাষ্ট্র বা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন, তবে তাদেরও আইন ও জনগণের আদালতে জবাবদিহি করতে হবে। বিচার বিভাগকে দলীয় অনুগত লোক দিয়ে পূর্ণ করে ফেলা দেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। দুঃখজনক হচ্ছে ড. ইউনূসের সরকার আরো নগ্নভাবে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছেন।'
Comments