ইতালিতে আবারও ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, প্রবাসীদের মধ্যে শোক ও নিরাপত্তাহীনতা

ইতালির রাজধানী রোমে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন মামুন খান (২২) নামের এক বাংলাদেশি যুবক। স্থানীয় সময় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে রোমের ক্রিস্টোফোরো কলম্বো সড়কে এ হত্যাকাণ্ড হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এটি ছিনতাই নয়, বরং ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে সংঘটিত একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামুন খানের দেশের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলায়। প্রায় তিন বছর আগে জীবিকার তাগিদে রোমানিয়া হয়ে ইতালিতে আসেন তিনি। কাজ করতেন স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মত কাজ শেষ করে ক্রিস্টোফোরো কলম্বো সড়কের পাশে পার্কে কয়েকজন স্বদেশি যুবকসহ বসে ছিলেন মামুন। পার্কের কিছু দূরে এক যুবককে ছুরি দেখিয়ে ছিনতায়ের চেষ্টা করলে সেই যুবক এদের কাছে এসে সাহায্য চাই। এসময় সবাই মিলে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। তবে পিছন থেকে আবার এসে কিছু একটা ছুড়ে মারে মামুনের দিকে তখন মামুন তাকে ধাওয়া দিতে গেলে এক পর্যায় ছিনতায়কারীর মুখোমুখি হয়ে যায় তখন ছিনতাইকারী মামুনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবা (ARES 118)-এ ফোন করেন তার সাথে থাকা বাংলাদেশীরা। এসময় চিকিৎসকরা এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
স্থানীয় পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, প্রাথমিকভাবে এটি ছিনতাই মনে হলেও বিস্তারিত তদন্তে বেরিয়ে আসে এটি সম্ভবত পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
'মামুন খানের সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই অভিযুক্তদের শনাক্ত করা যাবে'।
পুলিশ বলছে, মামুনের সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ বা অন্যান্য সামগ্রী অক্ষত ছিল। ফলে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং পূর্বশত্রুতার জেরে এই হামলা হয়ে থাকতে পারে।
মামুন খানের মৃত্যুতে রোমে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
রোমে বসবাসরত প্রবাসী ও বেলাবো উপজেলা সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আমান বলেন, 'এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে হয় একজন বাংলাদেশিকে—এ দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই, প্রশাসন দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনুক'।
জলিল নামে আরেকজন প্রবাসী বলেন, প্রবাসীরা এই দেশে পরিশ্রম করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান। কিন্তু দিনের পর দিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরা'।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে প্রথম সচিব (শ্রম ও কল্যাণ) আসিফ আনাম সিদ্দীকি জানান, বিষয়টি দূতাবাস অবগত হয়েছে। আমরা পুলিশের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। পাসপোর্টসহ অনান্য তথ্য আমরা পেয়েছি।
এই ধরনের সহিংসতা রোধে এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সম্প্রতি মান্যবর রাষ্ট্রদূত স্যার একাধিকবার রোমের প্রিফেক্টের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। মামুন মিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে পুনরায় ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
মামুন হত্যার বিচারের দাবিতে ৬ জুলাই মন্তালিওয়ালা গির্জার সামনে প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে স্থানীয় কমিউনিটি।
বাংলাদেশে থাকা মামুন খানের পরিবার তার লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মামুন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসে বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
Comments