গভীর ও ভালো ঘুমের জন্য রাতে হালকা ব্যায়াম করুন

গভীর ও শান্তিময় ঘুমের জন্য বিছানাতেই হালকা কিছু ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং হতে পারে আপনার দৈনিক রুটিনের সবচেয়ে উপকারী অংশ। গলা, কোমর, হিপ ও পায়ের পেশিতে জমে থাকা টান দূর করার পাশাপাশি এই স্ট্রেচগুলো মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রেচিং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, এবং আমাদের শরীরকে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত করে।
স্ট্রেচিং কেন ঘুমে সহায়ক?
রাতের স্ট্রেচিং মনোযোগ ফিরিয়ে আনে নিজের শরীর ও নিঃশ্বাসে, দূরে রাখে সারাদিনের মানসিক চাপ। নিয়মিত স্ট্রেচ করলে ঘুমের সময় পেশি টান ধরা বা ব্যথা হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। মেডিকেল বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড রোজেন বলেন, "স্ট্রেচিং রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে শরীরকে বিশ্রামের সংকেত দেয়, যা অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।"
অন্যদিকে, ড. অ্যান্ডি ফ্র্যাঙ্কলিন-মিলার বলেন, "মাইন্ডফুলনেস আর শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনের সঙ্গে স্ট্রেচ করলে হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি (এইচআরভি) বাড়ে, যা স্ট্রেস কমায়, হৃদ্স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ঘুমের মান বাড়ায়।"
কতক্ষণ স্ট্রেচ করা উচিত?
প্রতিদিন রাতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় দিন স্ট্রেচিংয়ে। প্রতিটি স্ট্রেচ ২০–৬০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এমনভাবে যাতে আরাম বোধ করেন, কিন্তু ব্যথা না পান। ঘুমের আগে বিছানায় করা ৭টি সহজ স্ট্রেচিং।
১. সিঙ্গেল নি রোটেশন বা হাঁটু ঘোরানো
পিঠের উপর শুয়ে এক পা বুকের দিকে টেনে এনে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দিন। এতে কোমর, হিপ এবং পেটের পেশি আরাম পায়।
ডা. ফ্র্যাঙ্কলিন-মিলার বলেন, "এই স্ট্রেচ 'অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম' বা স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে, যার ফলে হৃদস্পন্দনের তারতম্য বাড়ে ও ঘুম সহজ হয়।"
২. গলার ঘূর্ণন
চিবুক বুকে নামিয়ে ধীরে ধীরে মাথা ঘোরান। ফোনে বা ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে জমে থাকা গলা ও কাঁধের পেশির চাপ কমাতে এটি কার্যকর। ডা. ফ্র্যাঙ্কলিন-মিলার বলেন, "এই স্ট্রেচ মাথা ও ঘাড়ের টান কমিয়ে পেশিতে রক্ত চলাচল বাড়ায়, ফলে মাথাব্যথা কমে।"
৩. ফিগার ফোর স্ট্রেচ
এক পা অন্য হাঁটুর ওপরে রেখে নিচের পা বুকের দিকে টানুন। গ্লুটিয়াল, হিপ ও লোয়ার ব্যাক পেশিতে এটি আরাম দেয় এবং সায়াটিকা উপসর্গ কমায়। ডা. ফ্র্যাঙ্কলিন-মিলার বলেন, "যাদের সায়াটিক নার্ভ' বা পেছনের পেশিতে টান আছে, তারা এই স্ট্রেচ থেকে অনেক উপকার পান। এটি স্নায়ুর জটিলতা কমাতে সহায়তা করে।"
৪. পাশ ফিরে কোয়াড স্ট্রেচ
একদিকে শুয়ে ওপরের পা ভেঙে পায়ের পাতা হাতে ধরে গ্লুটের দিকে টানুন। এটি হাঁটু ও উরুর সামনের পেশির চাপ কমায়। ডা. রোজেন জানান, "দিনভর হাঁটা-চলা, সিঁড়ি ভাঙা কিংবা চেয়ার থেকে ওঠা-বাসার কারণে এই পেশি অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়। ঘুমের আগে এই পেশি শিথিল না করলে রাতে পেশিতে টান পড়ে, যা ঘুম ভেঙে দিতে পারে।"
৫. গোড়ালি নড়া ও ঘূর্ণন
পিঠে শুয়ে পায়ের পাতা ওপর-নিচে নাড়ান এবং বৃত্তাকারে ঘোরান। এটি পায়ের রক্তপ্রবাহ বাড়ায় ও সকালের ব্যথা কমায়। ডা. রোজেন বলেন, "এই স্ট্রেচ 'প্ল্যান্টার ফেসিয়া' নামের পেশি ও টিস্যুর ওপর চাপ কমায় এবং রক্ত চলাচল উন্নত করে। ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠে পায়ে ব্যথা অনুভব হয় না।"
৬. পাশ ফিরে হিপ ফ্লেক্সার স্ট্রেচ
এক পাশে শুয়ে নিচের পা সোজা রেখে ওপরের হাঁটু বুকের দিকে টানুন। লম্বা সময় বসে থাকার ফলে হিপ ফ্লেক্সর টাইট হয়ে যায়, এই স্ট্রেচ তা মুক্ত করতে সাহায্য করে। ডা. রোজেন বলেন, "দিনভর বসে কাজ করার ফলে এই পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। এই স্ট্রেচ কোমরের সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং পিঠের চাপ কমিয়ে ঘুমানোর ভঙ্গি আরামদায়ক করে তোলে।"
৭. পেলভিক টিল্ট
পিঠে শুয়ে হাঁটু ভাঙা অবস্থায় কোমর বিছানায় চেপে ধরুন, পেলভিস সামান্য ওপরে উঠান। এতে কোমরের পেশি শিথিল হয় এবং মেরুদণ্ডের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ডা. রোজেন বলেন, "এই হালকা স্ট্রেচ পিঠের নিচের পেশি শিথিল করে এবং মেরুদণ্ড সঠিকভাবে সোজা রাখতে সাহায্য করে। এতে গভীর 'কোর' পেশি সক্রিয় হয়, যা শরীরের সামনের ও পেছনের পেশির ভারসাম্য বজায় রাখে।"
তথ্যসূত্র: রিয়েলসিম্পল
Comments