হাতের তাপমাত্রা বিষয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

অন্ত্রের অবস্থা কেমন, তা হয়তো খুব একটা ভাবা হয় না আমাদের। কিন্তু এর সমস্যা হলে ঠিকই সুস্থতার জন্য নানা চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় অনেকেই আবার বলে থাকেন, হাতের তাপমাত্রাই অন্ত্রের অবস্থা জানান দিয়ে থাকে। অবাক হলেও এটাই সত্য বলে জানাচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান।
হাতের তাপমাত্রাকে শরীরের মধ্য দিয়ে চলা শক্তি ও মানসিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ব্যাপারে চেন্নাইয়ের শ্রী বালাজি মেডিকেল সেন্টারের ডায়েটিশিয়ান দীপালক্ষ্মী বলেছেন, হাতের তাপমাত্রা থেকে শরীরের রক্ত সঞ্চালন, তাপ নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য কেমন আছে―এসব বুঝতে পারা যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, শরীরের মূল তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ব্যাপারে দীপালক্ষ্মী বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ একজন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন, এরপর দেখা গেল যিনি খেয়েছেন তার শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমছে। এর অর্থ হচ্ছে, অন্ত্র অভ্যন্তরীণ তাপস্থাপক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
ডায়েটিশিয়ান দীপালক্ষ্মী বলেন, হাত সবসময় গরম থাকলে এর অর্থ, শরীর নিয়মিত নড়াচড়া করছে। শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ঠিক আছে। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রও সুষম ও স্বায়ত্তশাসিত। বিপরীতে টানা ঠান্ডা হাত হচ্ছে রক্তপ্রবাহ দুর্বল। হজমে সমস্যা রয়েছে। প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছেন ওই ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে অন্ত্র ভারসাম্যহীনতা বা ডিসবায়োসিসের মাধ্যমে আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে।
এদিকে চেন্নাইয়ের প্রাগম্যাটিক নিউট্রিশন সংস্থার প্রধান পুষ্টিবিদ মিনু বালাজি জানিয়েছেন, হাতের তাপমাত্রা হজমজনিত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। এ তাপমাত্রা বিভিন্ন কারণে কম-বেশি হতে পারে। অবশ্য চারটি কারণ রয়েছে।
হাতের কেমন তাপমাত্রা কীসের ইঙ্গিত:
ঠান্ডা হাত: রক্ত সঞ্চালনের দুর্বলতা বা থাইরয়েডের সমস্যার ইঙ্গিত হচ্ছে ঠান্ডা হাত। আইবিএস আক্রান্ত একাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ঠান্ডা হাত অটোনমিক ডিসফাংশনের জন্যও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গরম হাত: গরম, লালচে ত্বক হজমজনিত সমস্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যা হাইপারথাইরয়েডিজম এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়া, নিউরোএন্ডোক্রাইন বা মাস্ট সেল সমস্যার মতো জটিলতার জন্যও হতে পারে। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে উষ্ণ আবহাওয়া, ব্যায়াম ও উচ্চ রক্তচাপের কারণেও হাত গরম হতে পারে।
ঘামযুক্ত হাত: সাধারণত হাইপারহাইড্রোসিস নামের একটি অবস্থা হচ্ছে ঘামযুক্ত হাত, যা অতিরিক্ত ঘর্মগ্রন্থিগুলোর সক্রিয়তার জন্য হয়। ডায়াবেটিস ও থাইরডের রোগের মতো স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বা নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণের জন্যও এমন হতে পারে।
শুকনো হাত: কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ও ডায়েরিয়ার মতো অন্ত্রের সমস্যা থেকে হাত শুকনো হতে পারে। লিভারের রোগ, থাইরয়েডর সমস্যা, ত্বকের অ্যালার্জি বা সংক্রমণের কারণেও হাত শুকতো হয়ে থাকে।
পরামর্শ: চিকিৎসকরা উল্লেখিত ব্যাপারে কথা বললেও জানিয়েছেন, শুধুই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য হাতের তাপমাত্রা নির্ধারিত হয় না। কিন্তু এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে হজমে সমস্যা, ক্লান্তি বা চাপ সম্পর্কিত সমস্যার মতো কারণে এই তাপমাত্রা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
Comments