ভাত খেয়েও যেভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

সাদা ভাত মানেই কি অস্বাস্থ্যকর? পশ্চিমা ধারণায় এমনটাই প্রচলিত, কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। বিশ্বের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন ভাত খান, যার বেশির ভাগই সাদা ভাত। এটি শুধু সহজলভ্যই নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। রান্নাও হয় দ্রুত, খেতেও তুলনামূলকভাবে নরম যে অনেকেরই পছন্দ। তবে অনেকেই মনে করেন ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের পছন্দের খাবার 'ভাত' বাদ দিতে হবে। বিষয়টা মোটেই এমন নয় বলছেন পুষ্টিবিদরা। ওজন নিয়ন্ত্রণের যাত্রায় ভাত খেলে কিছু নিয়ম মানতে বলছেন তারা। তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আপনার প্রিয় খাবার বাদ দিতে হবে না। হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
পুষ্টির দিক দিয়ে অবশ্য সাদা ভাত বাদামি ভাতের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে। এতে আঁশ, মিনারেল এবং ভিটামিন কিছুটা কম থাকে। তবে সঠিকভাবে রান্না ও উপযুক্ত খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে সাদা ভাতও হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সাদা ভাতকে স্বাস্থ্যকরভাবে উপভোগ করা যায়।
১. ডাল বা শিমের সঙ্গে মিলিয়ে খান: ডাল, ছোলা কিংবা কালো মটরের সঙ্গে সাদা ভাত খেলে তৈরি হয় 'কমপ্লিট প্রোটিন', অর্থাৎ এমন এক প্রোটিন যার সব ৯টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ নিরামিষভোজীদের জন্য। একই সঙ্গে এই খাবার আঁশে ভরপুর, যা রক্তে শর্করার মাত্রা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২. সবজি দিয়ে তৈরি করুন ভেজিটেবল রাইস: গাজর, পুঁইশাক, লাউ কিংবা কুমড়ার মতো অ-স্টার্চি সবজির সঙ্গে সাদা ভাত মিশিয়ে তৈরি করুন ভেজিটেবল রাইস। এতে যেমন বাড়বে ভাতের পুষ্টিগুণ, তেমনই পাবেন প্রচুর আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
রেসিপি টিপস: পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও কিশমিশ একসঙ্গে ভেজে তার মধ্যে ভাত ও সবজি মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু স্প্যানিশ ভেজিটেবল রাইস।
৩. সুষম থালায় দিন ভাতের জায়গা: প্লেটের এক-চতুর্থাংশে শস্য জাতীয় খাবার (যেমন সাদা ভাত), এক-চতুর্থাংশে প্রোটিন এবং বাকি অংশে শাকসবজি ও ফল রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ: ১/৪ প্লেট ভাত, ১/৪ গ্রিলড মাছ এবং ১/২ প্লেট সিদ্ধ সবজি—একটি পরিপূর্ণ খাবার।
৪. একপাত্রে রান্না করা খাবারে ব্যবহার করুন: বিরিয়ানি, খিচুড়ি, বা দক্ষিণ ভারতের সাম্বার রাইসের মতো একপাত্রে রান্না করা খাবারগুলোতেও ভাত স্বাস্থ্যকরভাবে উপভোগ করা যায়। পাশাপাশির এক বাটি কোলস্লো বা সালাদ দিলে আঁশের চাহিদা পূরণ হবে সহজেই।
৫. ভেজ রাইস বোল তৈরি করুন: সাদা ভাতের ওপর লেটুস, ক্যাবেজ, গাজর, পেঁয়াজ, অলিভ, অ্যাভোকাডো ও সস দিয়ে তৈরি করুন রাইস বোল। এতে একদিকে যেমন থাকবে নানা পুষ্টি উপাদান, তেমনই চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর চর্বিও পাবেন।
৬. লিন প্রোটিন দিয়ে বানান বুরিটো বোল: মাংস খেলে চেষ্টা করুন লিন (কম চর্বিযুক্ত) মাংস ব্যবহার করতে। যেমন গ্রিলড চিকেন, স্মোকড বিফ, কিংবা হালকা তেলে রান্না করা টেম্পে। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকবে এবং হৃদরোগের ঝুঁটিও হ্রাস পাবে।
৭. মাছের সঙ্গে পরিবেশন করুন: সাদা ভাতের সঙ্গে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন মাছ রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগ, স্নায়ু সমস্যা ও লিভার হেলথের জন্য উপকারী। মাছের ঝোল, গ্রিলড ফিশ বা ফিশ ক্যাসারোল হতে পারে ভাতের পারফেক্ট কম্প্যানিয়ন।
৮. বেল পিপারে স্টাফ করে খান: রঙিন বেল পিপারে রান্না করা ভাত, কর্ন, হালকা গরুর কিমা ও চিজ দিয়ে স্টাফ করে ওভেনে বেক করুন। এতে মিলবে প্রোটিন, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একসঙ্গে। বেল পিপারে থাকা ক্যাপসেইসিন শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৯. এয়ার-ফ্রায়ারে বানান হেলদি ক্রোকেটস: সাদা ভাত, টার্কির মাংস, চিজ, ডিম ও ব্রেডক্রাম মিশিয়ে বল বা রোল তৈরি করে এয়ার-ফ্রায়ারে বেক করুন। ডিপ ফ্রাই না করে বেক করায় চর্বি কম থাকবে, অথচ স্বাদে কোনও কমতি থাকবে না।
সাদা ভাত একেবারে বাদ দেয়ার কিছু নেই। বরং সঠিকভাবে খাওয়ার কৌশল জানলেই এটি হয়ে উঠতে পারে পুষ্টিকর একটি খাদ্য উপাদান। আঁশ, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খান সাদা ভাত পেট ভরবে, শরীরও থাকবে সুস্থ।
Comments