সৌদি আরব হতে চলেছে আগামী দিনের ফ্যাশন হাব

কয়েক মাস আগে 'রেড সি ফ্যাশন উইক' নামে একটি নজর কাড়া ফ্যাশন শো'র আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় সৌদি আরব। এতে দেখা গেল সাঁতারের পোশাকে পুলের ধারে হাঁটছেন মডেলরা। যে দেশে এক দশক আগেও মহিলাদের আপাদমস্তক ঢাকা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক ছিল,সেই রক্ষণশীল ইসলামিক দেশে এ হেন আয়োজন অবশ্যই বড় চমক। পুলসাইড ফ্যাশন শো-টির আয়োজনে ছিলেন মরোক্কোর ডিজাইনার ইয়াসমিনা কানজাল। বেশির ভাগই লাল, হলদে-বাদামী ও নীল রঙের পোশাক ছিল মডেলদের।
নেট দুনিয়ায় এর প্রশংসা যেমন হচ্ছে, তেমনি আছে মুসলিমদের কট্টর সমালোচনাও। তবে সৌদি আরব সবকিছুকে দূরে ঠেলে হতে চলেছে আগামী দিনের ফ্যাশন পাওয়ার। এরকম একটি তথ্য দিয়েছে আরবীয় নারীদের আধুনিক জীবন ধারা নিয়ে চালু হওয়া প্ল্যাটফর্ম 'এবাউট হার'।
অনেকদিন আগেই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত পড়েছে সৌদি নারীদের। পা পড়েছে সিনেমা হলে। পরিবর্তনের সৌদি আরবে এ বার আরও বদল চাচ্ছেন রাজকন্যা নৌরা বিন্তে ফয়জল আল-সৌদ। তিনি আরব ফ্যাশন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ কিছুদিন আগেও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন নিয়ে ভাবত না। প্যারিস, মিলান, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক সহ অনেক শহর ফ্যাশন সপ্তাহের আয়োজন করলেও মধ্যপ্রাচ্য এবং উপসাগরীয় দেশগুলো - বিশেষ করে সৌদি আরব নিরব ছিল। এখন রিয়াদ হয়ে উঠছে ফ্যাশন জগতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বলা হচ্ছে ২০২৫ সালের শেষে সৌদি আরবের ফ্যাশন মার্কেটের রিটেইল চাহিদা ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এর পরিমাণ হবে ৩২ বিলিয়ন ডলার। বিলাসবহুল ফ্যাশন বাড়বে ১৯ শতাংশ। পর্দাল অন্তরালে থাকলেও সৌদি আরবে ফ্যাশন সবসময়ই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তবে এখন ধীরে ধীরে অনেকটাই শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ।
এই ফ্যাশন ফোকাস সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হচ্ছে। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন কমিশন সক্রিয়ভাবে এর প্রচার করছে। নিশ এরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম মুসাল্লি বলেন,সৌদি শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশ নারী,তাই তাদের আধুনিক জীবন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০২৫ সালের মধ্যে যে ৩২ বিলিয়ন ডলার ফ্যাশন মার্কেটের কথা বলা হচ্ছে সেখনে বিলাসবহুল ফ্যাশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বখ্যাত চালহুব গ্রুপের মতো বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো স্থানীয় রুচির সাথে খাপ খাইয়ে সৌদি বাজারে বিনিয়োগ করছে। চালহুব গ্রুপের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার জেসমিনা বান্দা সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভ্রমণের মাধ্যমে ফ্যাশন প্রবণতায় সৌদি নারীদের প্রভাব এবং বিলাসবহুল ফ্যাশনের প্রতি তাদের সখ্যতা পরখ করে দেখছেন।
সৌদি আরবের পর্যটন খাত বাড়ার সাথে সাথে ফ্যাশন ব্যয় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি সরকার বিশ্বাস করে যে স্থানীয় ফ্যাশন শিল্পের বিপুল অব্যবহৃত সম্ভাবনা রয়েছে,যা একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। ভিশন ২০৩০ এর লক্ষ্য হল স্থানীয় পোশাক উৎপাদন বাড়ানো,আমদানি কমানো,কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করা।
ফ্যাশন বিষয়ক শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে সৌদি সরকার। দেশটির নীতি নির্ধারকরা বিকাশমান ফ্যাশন শিল্পের জন্য আপডেট করা পাঠ্যক্রম,বিশেষ কোর্স এবং ব্যবহারিক দক্ষতাও উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে অনেক কাজের সুযোগ হতে পারে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের লক্ষ্য হলো ফ্যাশন সৃজনশীলতা এবং ব্যবসায় সৌদি যুবক যুবতীদের উৎসাহিত করা এবং রিয়াদকে একটি স্থায়ী বৈশ্বিক ফ্যাশন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
Comments