করলার জুস কি সত্যিই উপকারী?

করলা হচ্ছে তেতোজাতীয় এক ধরনের সবজি। এটি যেমন এক শ্রেণির মানুষের কাছে খুবই পছন্দের খাবার, আবার অনেকের কাছেই ভীষণ অপছন্দের করলা। মূলত তেতো স্বাদের কারণেই অনেকে পছন্দ করেন না করলা। সবুজ রঙেরর এই সবজি আপনার পছন্দ কিংবা অপছন্দ যাই হোক না কেন, এর কিন্তু উপকারিতা অনেক।
করলা বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। কেউ ভাজি করে খান, আবার কেউ তরকারি করে খেয়ে থাকেন। এরই মধ্যে কেউ কেউ আবার করলার জুস বা রস পান করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক থাকতে পারে। করলার রস খাওয়ার ব্যাপারে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমান। তিনি জানিয়েছেন, করলা হচ্ছে ওষধি গুণসম্পন্ন সবজি। যা শরীরের জন্য উপকারী।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, করলায় ভিটামিন এ, সি এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক ও আয়রনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। করলা যদি বেশি তেল দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভাজি করা হয়, তাহলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যায়। সেই হিসেবে করলার রস পানে ভালো উপকার মিলে।
করলার জুস করার জন্য প্রথমে ছোট ছোট টুকরো করে বীজগুলো ফেলে দিন। তারপর ব্লেন্ডারে জুস করে নিতে পারেন। এরপর ছাকনির মাধ্যমে রস আলাদা করে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পান করুন। প্রয়োজনে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
করলার জুসের উপকারিতা: করলার জুস ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে পলিপেপটাইড পি এবং চারেন্টিন নামের যৌগ উপাদান রয়েছে। যা শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে সুগারের মাত্রা হুটহাট বেড়ে যেতে দেয় না করলার জুস। এ জন্য ডায়াবেটিস আক্রান্তদের করলার জুস খাওয়ার কথা বলা হয়।
এদিকে অনেকের ধারণা, করলার রস পানে ডায়াবেটিস, অর্থাৎ সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এ ধারণা ঠিক নয়। ডায়াবেটিস আক্রান্তরা নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি করলার রস পানে উপকারিতা পাবেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত করলার রস পান করা যাবে না। এতে হঠাৎ করেই সুগার লেভেল একদম কমে যেতে পারে।
করলার রসে পানি ও মধু মিশিয়ে পান করলে এতে অ্যাজমা, শ্বাসরোগ, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়। করলার জুসে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সকালে খালি পেটে এই রস খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে উপকার মিলে। আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও উপাকিরতা রয়েছে।
করলার জুসে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব উপাদান দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ রসে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চর্মরোগ থেকে মুক্তিতে সহায়তা করে। করলার রস রক্ত পরিষ্কার করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
সতর্কতা: করলার রস বা জুস পান উপকারী হলেও এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। একটি করলা রস করলে ঠিক যতটুকু হয়, ততটুকুই খাওয়া উচিত; বেশি নয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এ রস না খাওয়াই ভালো। শিশুদের থেকে দূরে রাখতে হবে। তাদের পেট ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। আবার বড়দের ক্ষেত্রে উপকারের আশায় বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এতে লিভারের প্রদাহ ও ডায়রিয়া হতে পারে। নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে করলার রস খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর টানা এ রস না খাওয়াই ভালো। তিনমাস খাওয়ার পর ১২-১৫ দিন বিরতে নেয়া উচিত।
Comments