শীতকালে রসুন খেলে শরীরে যে প্রভাব পড়ে
![](https://dhakajournal.com/sites/default/files/styles/big_1/public/images/2025/02/02/roshun.jpg?itok=EmK-MqPY×tamp=1738484100)
শীতের প্রথম হিমেল হাওয়ায় সুস্থ থাকতে গরম পোশাক পরতে হয়। তবে শুধু গরম পোশাক পরলেই হবে না, শরীর উষ্ণ রাখতে সঠিক খাবারও খেতে হবে। রসুন এমন একটি উপাদান যা শীতের ঠান্ডা ও সর্দি-কাশি দূরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যারা কাঁচা রসুন খেতে পছন্দ করেন না, তারা এটি রোস্ট করে খেতে পারেন। শীতের দিনে প্রতিদিন রোস্টেড রসুন খেলে শরীরে যেভাবে প্রভাব পড়ে সে বিষয়টি উঠে এসেছে হেলথশটের প্রতিবেদনে। পুষ্টিবিদ গৌরী আনন্দ এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে।
রোস্টেড রসুনের গুরুত্বপূর্ণ: রোস্ট করার পর রসুনের কড়া স্বাদ নরম হয়ে মিষ্টি ও মাখনের মতো হয়, যা যেকোনো রেসিপিতে স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে পারে। রোস্টেড রসুনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। শীতকালে সুস্থ ও সংক্রমণমুক্ত থাকতে রোস্টেড রসুনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
রোস্টেড রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যালিসিন রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যালিসিনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য শীতকালীন বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধ করতে পারে। এক গবেষণা অনুযায়ী, রোস্টেড রসুন খেলে শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
প্রদাহ কমায়
রোস্টেড রসুনে থাকা অ্যালিসিন ও সালফারযুক্ত যৌগ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 'কারেন্ট ইস্যু ইন মলিকিউর বায়োলজি' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, এই যৌগগুলো শরীরের প্রদাহ সূচক যেমন সাইটোকাইনস কমাতে সাহায্য করে। এটি বাতের ব্যথা, অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ এবং হাঁপানির মতো সমস্যার উপশম করতে পারে।
হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো
নিউট্রিশনিস্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, রোস্টেড রসুন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে। এতে থাকা উপাদান রক্তনালী শিথিল করতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে, এটি এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে, যা ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি হ্রাস করে।
হজম শক্তি উন্নত করে
রোস্টেড রসুন হজমে সহায়ক এবং গ্যাস ও বদহজম কমায়। এটি হজম এনজাইম উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, ফলে খাবার সহজে ভেঙে যায় এবং পুষ্টি শোষণের হার বাড়ে। এ ছাড়াও, এটি মৃদু জোলাপের মতো কাজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
রোস্টেড রসুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়। ফুড সায়েন্স বায়োটেকনোলজি জার্নালের গবেষণায় বলা হয়েছে, এতে ভিটামিন সি ও ই রয়েছে, যা কোষ ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার ও স্নায়ুরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।যেভাবে রোস্টেড রসুন খাবেন: রোস্টেড রসুনের উপকারিতা পেতে এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:
- ব্রেডে মাখিয়ে খান: রোস্টেড রসুনের নরম ও ক্যারামেলাইজড কোষাগুলো টোস্টেড ব্রেডে মাখিয়ে সুস্বাদু স্ন্যাক হিসেবে খাওয়া যায়।
- সুপ ও স্টুতে মেশান: রোস্টেড রসুনের স্যুপ ও স্টুর স্বাদ বৃদ্ধি করে।
- গার্লিক বাটার তৈরি করুন: রোস্টেড রসুনের কোষাগুলো মাখনের সঙ্গে মিশিয়ে গার্লিক বাটার বানিয়ে নিন। এটি পাউরুটি, টোস্ট বা সবজির ওপর ব্যবহার করা যায়।
- সস ও ডিপে ব্যবহার করুন: রোস্টেড রসুন পেস্টো, মারিনারা সস বা ব্রথের স্বাদ বাড়ায়।
- ভাজা সবজির সঙ্গে ব্যবহার করুন: রোস্টেড সবজির সঙ্গে এটি মিশিয়ে খেলে চমৎকার স্বাদ পাওয়া যায়।
রোস্টেড রসুনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: যদিও রোস্টেড রসুনের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
- অতিরিক্ত রোস্টেড রসুন খেলে গ্যাস্ট্রিক, গ্যাস, ফাঁপা ভাব ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে
- কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রোস্টেড রসুন খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।
- রোস্টেড রসুনের খাওয়ার পর মুখে ও শরীরে তীব্র গন্ধ হয়।
- কিছু মানুষের রসুনে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে চুলকানি, ত্বকের র্যাশ বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
শীতের রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থতার জন্য রোস্টেড রসুন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি।
Comments