স্কুলগামী বাচ্চাদের টিফিন যেমন হওয়া উচিত
সন্তানকে ঘিরে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে সন্তানের প্রতিদিনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পরিবারের সদস্যদের বেশ সচেতন হতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় ঘরে বাচ্চার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার দিলেও অনেক বাবা-মা টিফিনে সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন না। অনেক সময় সন্তানের জিদের কাছে হার মেনে তাকে বাইরেই খাবার দিতে হয়। স্কুলগামী শিশুদের টিফিন কেমন হবে সে বিষয়ে জানিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা কনটেস্টে এনজিওর পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত।
তিনি বলেন, স্কুলগামী বাচ্চাদের টিফিনে ক্যালোরি ঠিক রাখতে হবে সেই সঙ্গে সারাদিন শক্তি জোগাবে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে। শিশুর পুষ্টির পাশাপাশি তার ক্ষুধার সমাধান হতে হবে টিফিনে যাতে সে ক্লাসে মনোযোগী হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে অনেক মায়েরাই বাসা আর অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে অল্প সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করতে হবে। বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এটা আপনার কাজ অনেক সহজ করে দেবে। পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে বলেছেন সেগুলো হলো:
১.স্কুল টিফিনে খাবারের ভিন্নতা থাকতে হবে। প্রতিদিন বাচ্চাদের একই খাবার দিলে তাদের খাবার নিয়ে একঘেয়েমি ও অনীহা চলে আসবে। তাই চেষ্টা করুন একেক দিন একেক ধরনের খাবার দিতে। কাজ সহজ করতে সপ্তাহের শুরুতেই ঠিক করতে পারেন কোন দিন বাচ্চাকে স্কুলে কি দিয়ে টিফিন দেবেন।
২.যেহেতু সকাল বেলা বাচ্চারা খুব বেশি কিছু নাস্তা করতে চায় না,কিন্তু এরপরেও সকালে কনফ্ল্যাক্স দিয়ে এক গ্লাস দুধ, একটি সিদ্ধ ডিম দিতে পারেন।
৩.বাচ্চার নাস্তা যেহেতু খুবই হালকা হয় সেক্ষেত্রে টিফিন টা হতে হবে এনার্জিটিক,স্বাস্থ্যসম্মত ও অবশ্যই ব্যালেন্স ডায়েট হতে হবে।
৪.যেসকল খাবার দিবেন সেগুলোর মধ্যে প্রোটিনযুক্ত খাবার অবশ্যই দিবেন, কারণ এটি বাচ্চার শরীর বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণ,পাশাপাশি শক্তি জোগান দিতে সাহায্য করবে।
৫. বাচ্চাদের টিফিনে স্বাস্থ্যকর হতে হবে। সহজে তৈরি করা যায় এমন খাবারের মধ্যে হতে পারে, চিকেন বা চিংড়ি নুডলস, চিকেন বা ফিস বল,চিকেন সাসলিক,অর্গান মিটের তৈরি স্ন্যাকস এবং চাল,ডাল, সবজির সমন্বয়ে খিচুড়ি ইত্যাদি।
৬. খাবার স্বাস্থ্যসম্মত করতে নুডলসের পরিমাণ কমিয়ে সবজি ও সিদ্ধ ছোলা বেশি দিয়ে, প্রসেস সস ও নুডলসের মশলা বাদ দিয়ে, কম তেলে রান্না করতে হবে। নুডলসের সঙ্গে চিংড়ি বা চিকেন দিলে সেটা আরও স্বাস্থ্যকর হবে। বাচ্চা সস খেতে চাইলে বাসায় বানানো সস দেয়া যাবে। বাজারের কেনা সস দেয়া যাবে না।
৭.অবশ্যই বাচ্চাকে ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। টিফিনে যেকোনো একটি ফল দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কলা,আপেল, কমলা,কয়েকটি খেজুর, পেঁপে, পেয়ারা দেয়া যেতে পারে। কলা, খেজুর ও সাইট্রাস ফলে রয়েছে বিভিন্ন মিনারেল, উল্লেখযোগ্য পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম যা ব্রেইনকে রাখবে এনার্জিটিক। সেই সঙ্গে প্রতিদিন কিছু বাদাম ও দিতে পারেন।
৮. বাচ্চারা স্কুলে গেলেই বাইরের খাবার খেতে যায়। এসব স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো না। তাই খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন কোনোভাবে অতিরিক্ত ফ্রাইড ফুড,চুইংগাম, চানাচুর, চিপস,চকোলেট,কোল্ড ড্রিংকস না খায়।প্রয়োজনে সতেজ ফলের জুস করে দিবেন যা বাচ্চাকে রিফ্রেশ রাখবে ও পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
৯. সবশেষে বাচ্চার টিফিন বক্স ও পানির বোতল যেন প্লাস্টিকের না হয়ে স্টিল বা হিট প্রটেক্টর প্লাস্টিক হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে, এতে সাস্থ্যের ঝুঁকি কমে যাবে।