শিশুদের যৌন নিগ্রহ পরিবারেই বেশি

মাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগ বেলা ১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করে। বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে তার ভগ্নিপতি ও বোনের শশুর।
এই আট বছরের শিশুটিকে নিগ্রহের ঘটনায় সারাদেশে যেমন প্রতিবাদ হয়েছে, তেমনি আতংকও বাড়িয়েছে। বোনের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিল এই ছোট্ট জীবনে একটু বাড়তি আদরের আশায়। কতোটা বিকৃতি আর নির্মমতা তাকে সইতে হয়েছে তা শুধু সে-ই জানত।
আমরা জানি কন্যা শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের মধ্যে ধর্ষণ এবং যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটে বাড়িতে এবং নিকটজনদের দ্বারাই। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে শিশুদের দেখাশোনার প্রতিষ্ঠান ও স্কুল। শিশুদের বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ ঘটে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়েছে যৌন নির্যাতন। খুন, অপহরণ এবং বাল্যবিবাহ তো আছেই।
শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারে জড়িতদের বেশিরভাগই পিডোফাইল। কিন্তু মাগুরায় এই শিশুটির সঙ্গে যা করা হয়েছে তা কেবলই পিডোফিলিয়া নয়। পুরো পরিবারটির ভিতরেই বিরাজ করছে এক ভয়ংকর যৌন বিকার।
কোন শিশুকে অন্য রকম ভাবে ছোঁয়া, চুম্বন, আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, নির্দিষ্ট বয়সের আগেই যৌনাঙ্গ সম্পর্কে পরিচয় করানো, এমন ভিডিও দেখানো, যা তার দেখার কথাই নয়, এমন কিছু খাওয়ানো, যা অল্প বয়সে যৌন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে - এর সবই পিডোফিলিয়ার ফাঁদ। আমাদের সমাজের ঘরে ঘরে শিশুদের জন্য এই ফাঁদ পাতা রয়েছে। এবং সেটা শুধু মেয়ে শিশুদের বেলায় নয়, ছেলে শিশুরাও নিরাপদ নয় এমনসব যৌন বিকারগ্রস্ত মানুষ থেকে। সবাই বিষয়টা জানে, কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। কারণ আমাদের পরিবারে ও সমাজে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা আড়াল করার প্রবণতা অতি বেশি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা, নারী সংগঠনের কর্মীরাসহ দেশবাসী। মিছিলে মিছিলে, শ্লোগানে শ্লোগানে নৃশংস সব নারীপ নিপীড়নের ঘটনার বিচার চায় মানুষ। 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগানে কেঁপেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও জনপদ। কিন্তু এর মধ্যেও দেখেছি আরো অনেক কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, অনেক ছেলে শিশুকে বলাৎকার করা হয়েছে, অনেক নারী পথে ঘাটে নিপীড়িত হচ্ছেন।
গণমাধ্যমে, সামাজিক মাধ্যমে চোখ পড়লেই দেখা যাচ্ছে চারদিকে আলোচনায় শুধুই ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, যৌন হেনস্থার মতো শব্দ। চারদিকে আসলে কী হচ্ছে তা স্পষ্ট এখন বুঝতে পারছে আমাদের শিশুরা। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমন এক পরিস্থিতিতে হয়তো অনেক শিশুই স্কুলে যেতে চাইবে না,পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না। অনেক পরিবারই শিশুকে কোথাও বেড়াতে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছয় মাসের শিশু কন্যাও – এমন খবর যখন উঠে আসে তখন সবাই আতংকিত হয়। তবে শুধু আতংক নয়, মোকাবিলার করার কথাই বেশি ভাবতে হবে সবাইকে।
সমাজ এখন যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে মেয়েদের যোদ্ধা তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই। এর পাশাপাশি ছোটদের যৌনতা বিষয়ক পাঠ দিতে হবে বাড়িতে, স্কুলে। অনেক স্কুলেই এখন শিশুদের ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শের ধারণা দেওয়া হয়। এর আরও ব্যাপকতা প্রয়োজন। শিশুকে বোঝাতে হবে, কারো কোন ধরনের স্পর্শই যদি তার খারাপ লাগে, তা হলে তাকে প্রতিবাদ করতে হবে, চোখ বড় করে নিপীড়কের দিকে তাকাতে হবে, অভিবভাবকের কাছে এসে অভিযোগ করতে হবে। বাবা-মা এবং অভিভাকদেরও এ বিষয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। শিশু এই ধরনের কোন অভিযোগ জানালে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, তুচ্ছ ঘটনা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
Comments