ট্রাম্পের সঙ্গে বিতণ্ডার পর ইউক্রেন কোন পথে?

হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের কাছে চরম অপমানিত হলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কিকে বুকে জড়িয়ে ধরে সব প্রকার সমর্থন চালিয়ে যাওযার প্রতিজ্ঞা করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারাও বলেছেন তারা আছেন জেলেন্সকির পাশে। কিন্তু এতে করে আসলেই সংকট অতিক্রম করতে পারবে কিনা সে নিশ্চয়তা পাচ্ছে না ইউক্রেন। কারণ খনিজ চুক্তি বাতিল হলে ট্রাম্প প্রশাসন চলমান সব সামরিক সহায়তা স্থগিত করতে পারেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
ইউরোপ জেলেনস্কির পক্ষ নিলেও ট্রাম্প-জেলেন্সকির বাকযুদ্ধ যে ইউক্রেনের জন্য ভালো হয়নি সেই বিবেচনাও করছে ইউরোপীয় নেতারা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তার পরিমাণ এত বেশি যে, শুধু ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুবিধাজনক জায়গায় রাখা যাবে না।
ওভাল অফিস বৈঠকের এজেন্ডা ছিল মাত্র দুটি - ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইউক্রেনের বিরল খনিজ বণ্টন চুক্তি। প্রথমে কিছুটা দ্বিমত করলেও আমেরিকার সঙ্গে খনিজ বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করতে রাজি হয়েছিল ইউক্রেন। হোয়াইট হাউসের এই বৈঠকেই এই বিষয়ে চুক্তি সাক্ষরের আশা করছিল দুই পক্ষ। কিন্তু দুই রাষ্ট্রনেতার এই ঝগড়া সবই অনিশ্চিত করে ফেলল।
বৈঠকটি ট্রাম্প জেলেন্সকির হলেও ঝগড়ায় বড় ভূমিকা রেখেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তাঁর একটি কথার উত্তর দিতে গিয়েই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। মিডিয়ার উপস্থিতিতেই একে অপরকে দোষারোপ করেন ট্রাম্প, ভ্যান্স এবং জেলেনস্কি। আন্তর্জাতিক পরিসরে এমন দৃশ্য কারও কল্পনায়ও আসে না। ভ্যান্স হঠাৎ বলে বসেন, 'চার বছর ধরে আমেরিকার এক জন প্রেসিডেন্ট সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে কড়া কড়া কথা বলে গিয়েছেন। তার পর পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। দেশের একটা বড় অংশ ধ্বংস করলেন। বাইডেনের পথে হেঁটে কখনই শান্তি কায়েম করা যায় না'।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর যা বলেছিলেন, এই বৈঠকেও তা জোরালোভাবে বলেন। তাঁর কথা হলো, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছনোর জন্য ইউক্রেনকে 'সমঝোতা' করতে হবে। এই যুদ্ধবিরতি কথাটা বারবার এসেছে আলাপে। কিন্তু জেলেন্সকি এই পথে যেতে নারাজ। তিনি ট্রাম্প এবং ভ্যান্সকে এমন কথাও বলেন যে, আপনারা তো আক্রান্ত হননি, তাই বুঝতে পারছেন না। জেলেন্সকি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন একজন খুনি, তার সাথে কোন সমঝোতা হবে না। কিন্তু ট্রাম্প অনঢ়। বলেন,'আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত! আমরা আপনাদের অনেক কিছুই দিয়েছি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন আপনি। শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে আপনাকে চুক্তি করতেই হবে। তার জন্য কিছু আপসও করতে হবে, তবে তা খুব বেশি নয়। চুক্তিবদ্ধ না-হলে আপনার সঙ্গে থাকবে না আমেরিকা। আপনাকে একাই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে'।
এই একাই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হুমকিটি মারাত্মক জেলেনস্কির জন্য। ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন, আমেরিকা সরে না আসা পর্যন্ত জেলেন্সকি নরম হবেন না। ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি শান্তি চান। আর কেউ না জানুক জেলেনস্কি ঠিকই জানেন যে, তাঁর দেশের জন্য ট্রাম্পের সমর্থন কতটা জরুরি। তাই পরদিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চান তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন কৌশলী হতে পারলেন না জেলেনস্কি? তিনি কি বিপদ ডেকে আনলেন ইউক্রেনের জন্যে? আমেরিকার মতো দেশ সরে গেলে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া জটিল হয়ে যাবে ইউক্রেনের জন্য। শুধু ইউরোপের সাহায্যে এগিয়ে চলা যাবে না সেটা জেলেনস্কি জানেন। তাই খনিজ চুক্তি করতেও বাধ্য হবে ইউক্রেন। তাই জেলেনস্কি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'আমরা খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত,কারণ সেটাই হবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করার প্রথম ধাপ'।
Comments