ব্যাটারিচালিত রিকশার ডিজাইন আর নিরাপত্তা বাড়াতে হবে
এ লেখা যখন লিখছি তখন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং ভাংচুরও চলছে। খুব সকাল থেকে এরা সড়ক অবরোধ করায় শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষসহ সব ধরনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ধাওয়ায় এরা সড়ক ছাড়েন মধ্য দুপুর পার করে।
গত পরশু ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারি রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয় আদালত। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়। সেদিন রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম নামের এক ছাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
আমাদের মনে আছে যে, ছয় মাস আগে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে গিয়ে পিছু হটেছিল শেখ হাসিনার সরকার। এখন অন্তবর্তী সরকারের সামনে আদালতের নির্দশেনা।
সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। প্রাণহানির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তিন চাকার যানবাহনের দুর্ঘটনা এবং এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক এই ব্যাটারিচালিত রিকশা। হু হু করে বাড়ছে এদের সংখ্যা এবং সাথে বাড়ছে বিপদ।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের প্রকৃত হিসাব সরকারের কোনো দপ্তরে নেই। তবে সরকারি পর্যায়েই ধারণা করা হয় রাজধানীতে তিন চাকার অবৈধ যানের সংখ্যা ১২ লাখের মতো। নানা ত্রুটিযুক্ত বিপুল পরিমাণ এসব যানের চলাচল একেবারে বন্ধ করা যাচ্ছে না, কারণ এই যানবাহনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন।
ঢাকায় আগে শুধু প্যাডেল রিকশা চললেও কয়েক বছর ধরে ব্যাটারি চালিত রিকশা বেড়েছে। অনিবন্ধিত ব্যাটারি রিকশার কারণে প্যাডেল রিকশা চালকদের আয় কমে গেছে। কিছুদিন আগে প্যাডেল রিকশাচালকদের সঙ্গে ব্যাটারি চালিত রিকশাচালকদের সংঘর্ষও দেখেছি আমরা।
আদালত বলছে, এই যন্ত্রচালিত রিকশা বন্ধ করতে হবে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের পক্ষে অভিমত আছে রাজনৈতিক দলের, এমনকি সুশীল সমাজের অনেকের। কিন্তু এই রিকশাগুলো যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সে কথা তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন না।
যেনতেনভাবে বাড়তে দেয়া হয়েছে এই রিকশা। বেড়েছে, কারণ এদের কাছ থেকে বিপুল চাঁদা নিতেন পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। তাহলে সমাধান কী? কারণ বন্ধ তো করা যাচ্ছে না। এই রিকশাগুলোর ডিজাইনে ত্রুটি আছে, তাই দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি। চালকরাও বেপোরোয়া। সেই অর্থে এ সব রিকশার কোন ব্রেক সিস্টেম নেই এবং এরা অতি দ্রুত ছুটে চলে। কোন কোন রাস্তায় এদেরকে গাড়ি, সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেও দেখা যায়। এ রিকশাগুলো আগে চলতো অলিগলিতে, এখন মূল সড়কেও নেমে গেছেন চালকরা।
ব্যাটারিচালিত চালকরা বলছেন তাদের পুনর্বাসন ছাড়া এই রিকশা বন্ধ করা যাবে না। এটি একটি জনপ্রিয় কথা এবং এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবে সুশীল সমাজ, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাই বন্ধ করার বিকল্পটাই হয়তো সরকারকে ভাবতে হবে। কারণ বিশাল একটি জনগোষ্ঠির জীবন-জীবিকার বিষয় জড়িয়ে গেছে এর সঙ্গে। হুট করে এসব রিকশা বন্ধ করলে অনেকেই পথে বসবেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর ডিজাইন বা নকশা নিয়ে ভাবা দরকার। ডিজাইন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং চালক, যাত্রী ও পথচারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সংশোধন করার পাশাপাশি চলাচলেও শৃঙ্খলা আনতে হবে। আইন করে দিতে হবে যে, বড় সড়কে কোনভাবেই আসতে পারবে না, হাইওয়েতে তো নয়ই।
লেখক: সাংবাদিক