মহাকাশ ঘুরে এসে ‘নতুন ইতিহাস’ গড়লেন কেটি পেরি

পপ তারকা কেটি পেরি ও পাঁচ সাহসী নারী যাত্রী ব্লু অরিজিন রকেটে চড়ে মহাকাশ ঘুরে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। জেফ বেজোসের এই স্পেস কোম্পানির ফ্লাইটটি ছিল মাত্র ১১ মিনিটের, তবে সেটাই ছিল ইতিহাস গড়ার জন্য যথেষ্ট। খবর বিবিসি।
ছয় নারীর এই দলে ছিলেন বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, সাংবাদিক গেইল কিং, নাসার সাবেক রকেট বিজ্ঞানী আইশা বোয়ে, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন, এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন। ফ্লাইটটি টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চল থেকে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে উৎক্ষেপণ হয়।
রকেটটি পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ওপরে উঠে গিয়ে মহাকাশের আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে। কয়েক মুহূর্তের জন্য তারা উপভোগ করেন ওজনহীন অবস্থা—এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা।
পৃথিবীতে ফিরে এসে কেটি পেরি বলেন, 'আমি জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত বোধ করছি, ভালোবাসার সঙ্গে আরো গভীরভাবে।' তিনি মাটিতে চুমু খান, তারপর আকাশের দিকে তুলে ধরেন একটি ডেইজি ফুল—যেটি তার মেয়ের নামও।
গেইল কিং বলেন, 'আমি শুধু একটু সময় নিতে চাচ্ছিলাম মাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে।' লরেন স্যাঞ্চেজ চোখ ভিজিয়ে বলেন, 'চাঁদকে জানালা দিয়ে দেখেছি। পৃথিবী ছিল শান্ত, কিন্তু জীবন্ত।'
স্পেসক্র্যাফ্টটি ছিল সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়—কোনো পাইলট ছিল না। যাত্রী শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যটক। ৬০ বছরের মধ্যে এটি ছিল প্রথম অল-ফিমেল স্পেস ফ্লাইট, যা সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভার একক অভিযানে।
মহাকাশযানের উড্ডয়নের সময় ভূমি থেকে তা দেখেছেন অনেক সেলিব্রিটি। কার্দাশিয়ান বলেন, 'আমি বুঝতেই পারিনি এটা কতটা আবেগময় হতে পারে। দাঁড়িয়ে আছি, আর শরীর জুড়ে অ্যাড্রেনালিন।
ওপরাহ উইনফ্রে তার বন্ধু গেইল কিংয়ের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, 'যে কিনা টার্বুলেন্সে অন্যের কোলে উঠে পড়ে, সে মহাকাশে গেল? এটা ভয় জয় করার উদাহরণ।'
তবে সব প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলেন, এটা যেন সত্যিকারের 'হাউজওয়াইভস ইন স্পেস'। সমালোচকরা বলছেন, এখানে বিজ্ঞানের চেয়ে বিনোদনের আয়োজনই ছিল বেশি।
তবুও মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. টানিয়া হ্যারিসন বলছেন, এটা হয়তো মার্কেটিং স্টান্ট, তবে এই অল-ফিমেল ফ্লাইট হয়তো অনেক নারীর মনে মহাকাশ নিয়ে স্বপ্ন জাগাবে।
ফ্লাইট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গেইল কিং বলেন, 'যারা সমালোচনা করছে, তারা আসলে বুঝতেই পারছে না কী ঘটছে এখানে।' লরেন স্যাঞ্চেজ বলেন, 'সমালোচকদের আমি ব্লু অরিজিনে আমন্ত্রণ জানাতে চাই—দেখুক কেমন করে হাজারো কর্মী হৃদয় দিয়ে এই মিশনে কাজ করে।'
ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে, জেফ বেজোসের হাত ধরে। যদিও টিকিটের পূর্ণ মূল্য প্রকাশ করা হয়নি তবে একটি আসনের জন্য জমা রাখতে হয় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। প্রতিটি যাত্রার আগে দুই দিন ধরে চলে কঠোর প্রশিক্ষণ। যাত্রীদের জরুরি পরিস্থিতি, জিরো গ্র্যাভিটির প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা প্রটোকল শেখানো হয়।
Comments