৭ বছর পর শেরপুর চেম্বারের নির্বাচন, প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ২২ শে আগস্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শেরপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। দীর্ঘ সাত বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সময়ে ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকার হরণ করায় চেম্বার অব কমার্সের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। তবে এবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার আলো ফিরে এসেছে। সমঝোতা নয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায় ব্যবসায়ীরা।
বেসরকারি, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক ব্যবসায়ী সংগঠনটি জেলার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হলেও দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিনত হয়েছিলো।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক হুইপ ও এমপি আতিউর রহমান আতিক তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার পছন্দের প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের দিয়ে চেম্বার পরিচালনা করতেন। এতে চেম্বার কার্যত একটি 'পকেট কমিটি'তে পরিণত হয়, যার ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হন প্রতিনিধি নির্বাচন করতে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে ব্যবসায়ী সমাজেও। এই প্রেক্ষাপটে ঘোষিত চেম্বার নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবুল আলম রকিব চলতি মাসের ১ জুন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ট্রেড, সাধারণ ও সহযোগী এই তিনটি গ্রুপের পৃথক খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১০ জুলাই। মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে ২৩ জুলাই এবং দাখিল করা যাবে ২৪ জুলাই।
বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হবে ২৬ জুলাই, আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৪ আগস্ট। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত, শহরের কালিরবাজার মহল্লার আফসার আলী বালিকা বিদ্যালয়ে।
নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রেড গ্রুপ থেকে ২ জন, সাধারণ গ্রুপ থেকে ১২ জন এবং সহযোগী গ্রুপ থেকে ৫ জন মোট ১৯ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এ ১৯ জন পরিচালক ২২ আগস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে চেম্বারের সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচন করবেন।
ব্যবসায়ী চান মিয়া বলেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা বেশ উঁচু। তারা মনে করছেন, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বাস্তব পরিবর্তন আসবে।
চেম্বার সদস্য ব্যবসায়ী রতন মিয়া জানান, চেম্বার কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নয়; এটি ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত স্বার্থের প্রতীক। আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যারা আমাদের সমস্যার কথা শুনবে এবং দায়িত্ব নিয়ে সঠিক সমাধানে এগিয়ে আসবে।"
এছাড়াও জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আগে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এবার যেন কোনোরকম রাজনৈতিক প্রভাব বা চাপ ছাড়াই গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়, সেটাই সকলের প্রত্যাশা।
শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব আরিফ হোসেন বলেন, এবার তিন হাজারেরও বেশি সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদস্যপদ নবায়ন করেছেন। সব সদস্যের একটাই প্রত্যাশা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ব্যবসায়ী মহলে এখন আলোচনার কেন্দ্রে একটাই কথা এবার যেন কারো রাজনৈতিক প্রভাব বা ক্ষমতার দাপটে নয়, বরং প্রকৃত প্রতিনিধিরাই নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
Comments