শেরপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, মোম জ্বেলে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

বৃষ্টির কারণে শেরপুরের শ্রীবরদীতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পায়নি উপজেলাবাসী। ঝড়-তুফান বিহীন শুধু বৃষ্টিপাতে এতো লম্বা সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখায় বিদ্যুৎ বিভাগের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, ঝড় তুফান হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত কোথাও ঝড়-তুফান হয়নি। এমনকি জোড়ে বাতাস পর্যন্ত ওঠেনি। তাহলে কেন বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করতে হবে।
শ্রীবরদী পৌর শহরে ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিছু দোকান মোমবাতি জ্বালিয়ে দোকান চালাচ্ছে। উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের চরম দূর্ভোগ। প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে চলছে না মেশিন। এছাড়াও বাসাবাড়িতে গৃহিণীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
শ্রীবরদী পৌর শহরের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন চার্জ, চার্জার লাইটসহ বাসা বাড়িতে ফ্রিজের মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, কোন ধরনের ঝড় হয়নি তাহলে বিদ্যুৎ কেন বন্ধ থাকবে। শুধু বৃষ্টি হলে এভাবে লম্বা সময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা রিতিমতো ভোগান্তি ছাড়া কিছুই না।
জানা যায় উপজেলার চিথলিয়া, ইন্দিলপুর, কুড়িকাহনিয়া, কুরুয়া, গোশাইপুর, শংকরঘোষ, ভারেরা ও তেনাচিড়া এলাকার লোকজন বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের স্বীকার হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় অটোরিকশার ব্যাটারি রিচার্জ করতে না পারায় সকাল থেকে অনেকের অটোরিকশা চালনা বন্ধ আছে। এতে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে অসাধুতা চালকরা। এতে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি কমেছে। অন্যদিকে গরীব চালকেরা রিকশা নিয়ে বাইরে বের হতে না পেরে উপার্জন করতে পারছেনা।
উপজেলার সদরের গরু খামারী মিনাল জানান, 'বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ নাই। কাল থেকে কুরবানির গরু গুলোর ঠিকমতো খাবার ও যত্ন নিতে পারছি না। জানিনা কখন বিদ্যুৎ আসবে। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে খুব ভোগান্তির মধ্যে আছি।'
খড়িয়াকাজিরচর ইউনিউয়নের. কৃষক মো. জফিল জানান, 'এল্লাহানি বৃষ্টি ও বাতাস হইলেই কারেন (বিদ্যুৎ) থাহে না। মনে অয় কারেন নিবার জন্য হেরা বয়ে থাহে'।
কুড়িকাহনিয়া নামাপাড়া এলাকার মো. নাছির উদ্দিন নামে এক যুবক বলেন, 'পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নাম্বারে কল দিলে ব্যস্ত বলে এবং কল রিসিভ হয় না। আমরা দ্বিগুণ সমস্যা নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। আমাদের লাইনের সমস্যা হলে ফোন দিতে হয় দুই অফিসে। লাইন আসছে ঝিনাইগাতি থেকে আর দেখাশোনা করে লংগরপাড়া অফিস। রোদ, ঝড়- বৃষ্টি যাই হোক সবসময় লোডশেডিং লেগেই থাকে। অফিসে ফোন দিলে বলে এই লাইনে গ্রাহক সংখ্যা বেশি তাই লোডশেডিং বেশি হয়।'
অটোরিকশাচালক জসিম বলেন, 'হালকা একটু বৃষ্টি আর বাতাস হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। যাওয়ার পর আর আসার কোনো খোঁজ থাকে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর বিদ্যুৎ গেছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসে নাই। তেমন ঝড়ও হয় নাই। বিদ্যুৎ না থাকায় গাড়িতে চার্জ দিতে পারি নাই। এই গাড়ি চালিয়ে আমার সংসার চলে।'
মো. ইমন নামের এক যুবক বলেন, 'আমি একজন ফ্রিলান্সার। দীর্ঘ ২৮ ঘন্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছি। আইপিএস এর চার্জ না থাকায় ফ্রিলান্সিং কাজ করে আয় করতে পারছিনা। প্রায় সময়ই এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।'
একই গ্রামের নারগিছ আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, 'বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং মোটরের পানি তুলতে পারছি না। আমি ৩টা ষাড় গরু পালি। ঈদের আগে ২টা বিক্রি করবো। বিদ্যুৎ না থাকায় গরু গোসল করাতে পারতেছিনা।'
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (এজিএম) সুর্য নারায়ণ ভৌমিক এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জেলার হেড অফিস থেকে ম্যাইন লাইন বন্ধ করেছে নিম্নচাপ ও বৃষ্টির জন্য। এর বাইরে তিনি আর কিছুই বলতে পারবেন না বলে তিনি জানান। অপরদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শ্রীবরদী উপজেলার আবাসিক অফিসার ইঞ্জিনিয়ার রোকুনজ্জামান কে বার বার কল দেয়া হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শ্রীবরদী উপজেলার আবাসিক অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. রুকনুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়টা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ৩৩কেভি লাইনের তেনাচিরা এলাকায় ফল্ট হয়েছিল। লাইনের ফল্টগুলো খুঁজে বের করতে দেরি হয়ে যায়। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়া ও ঝড়- বৃষ্টির ফলে লাইনের তারে বাঁশ এসে পড়েছিল। বৃষ্টির কারণে লাইন মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
Comments