যেসব কারণে বাড়ছে ধর্ষণ-আত্মহত্যা

ধর্ষণের পর কেটেছে ৪০ দিন। এরপর আত্মহত্যা। পটুয়াখালীতে জুলাই আন্দোলনের শহীদের মেয়ে লামিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে দায়িত্বশীলদের অবহেলা নিয়ে। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের পর একজন নারীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র। তাই বাড়ছে ধর্ষণের পর আত্মহত্যার ঘটনা।
কিছু দিন আগে মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনায় ফুঁসে উঠে দেশ। সেসময় ধর্ষকদের ছাড় না দেয়ার কড়া হুঁশিয়ারি দেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে চাই যে এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্র কোনোভাবেই ক্ষমা করবে না। এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।'
আশা ছিল, তার এই কঠোর বার্তা পৌঁছে যাবে অপরাধীদের কানে। তবে তা আর হলো কোথায়! পটুয়াখালীতে জুলাইয়ে শহীদের মেয়ে লামিয়া বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে মার্চ মাসে হয় ধর্ষণের শিকার। এখানেই শেষ নয়। এ ঘটনার ৪০ দিন পর রাজধানীর আদাবরে করলেন আত্মহত্যা। প্রশ্ন হলো, এই ৪০ দিন কোথায় ছিলেন দায়িত্বশীলরা?
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, 'এ ধরনের অপরাধীরা বার বার এমন অপরধা করে। বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা সাহস পেয়ে যায়। যিনি ধর্ষণের শিকার হন, তার মানসিক অবস্থার বিষয়টিও আমরা বিবেচনার মধ্যে আনিনি! আমরা মনে করি যে বিচার করলেই সব হবে।'
বদলায় মানুষ, বদলায় প্রেক্ষাপট। তবুও নারী অধিকার নিয়ে মুখে ফেনা তোলা সমাজ প্রতিবারই রাখে ব্যর্থতার প্রমাণ। আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রথম ৩ মাসে প্রতি ৯ ঘণ্টায় একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৭ শতাংশ নারী কোনো অভিযোগই করেননি। এর কারণ কী? কিসের এত ভয়?
কারণ ধর্ষণের পর একজন নারীকে সুরক্ষা দেয়া তো দূরে থাক, ঘটনার সাক্ষীদেরও থাকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। চিন্তার ভাঁজ তাই নারী অধিকারকর্মীদের কপালে।
নারী অধিকার কর্মী সীমা মোসলেম বলেন, 'একটা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সে কিন্তু ট্রমার মধ্যে চলে যায়। না হলে কেন সে এতদিন পর আত্মহত্যা করলো! নিজেরই অন্যায় হয়েছে বলে একটা মনোভাব সৃষ্টি হয়। কারণ এটা আমাদের বিচারেও রয়েছে যে ভুক্তভোগী নারীকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।'
ভুক্তভোগীর সামাজিক নিরাপত্তা এবং সামাজিকভাবে অপরাধীদের প্রতিহত করার পরামর্শ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও আরও সচেতন হতে হবে দায়িত্বশীলদের।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, 'যখন এটা নিয়ে সালিশ হয় হয়, তখন আপস করে ফেলতে বলা হয়। এছাড়া এমন কিছু শাস্তি দেয়, যেগুলো বিচারিক আদালতের শাস্তির বাইরে।'
আছিয়া-লামিয়াসহ কতশত ধর্ষণের শিকার নারীর নাম প্রতিদিনই যুক্ত হয় খবরের পাতায়। কখনো আবার হয়ে যায় প্রধান শিরোনাম। তবুও দিনশেষে একই ঘটনার হয় পুনরাবৃত্তি।
Comments