মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি কর্মীকে জাসদ নেতা উল্লেখ করে জামায়াতের বিবৃতি
কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন দৃশ্যমান। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে খোকন মোল্লা নামে এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। গত রবিবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ৩টার দিকে বুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ইউনিয়ন জামায়াতের আমির নাসিম রেজা মুকুল ও স্থানীয় বিএনপি কর্মী রাশেদ মাহমুদ নাসিরের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
এদিকে বিএনপি কর্মী নাসিরকে জাসদ নেতা উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। ১৩ জানুয়ারি সংগঠনটির পক্ষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম ও সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজা উদ্দিন জোয়ার। তবে
জামায়াতের এই অভিযোগকে অস্বীকার করেনি উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা। তার দাবি এক সময় নাসির জাসদের পক্ষে হাসানুল হক ইনুর নির্বাচন করেছে। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিজেকে বিএনপি কর্মী দাবি করা নাসির ও বিএনপির একাংশ।
জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের বুরাপাড়া গ্রামে বিএনপির ছদ্মবেশে জাসদের পরিচিত ক্যাডার বাহিনীর হামলায় জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মী নিহত ও ৩৫ জন নেতা কর্মী গুরুতর আহত হন। এবং স্থানীয় জামায়াত কর্মীদের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
বিবৃতিতে তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া উল্লেখ করা হয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জাসদ নেতা নাসির নব্য বিএনপি সেজে জোরপূর্বক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমলা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির নাসিম রেজা মুকুলকে ভয় ও হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
পরে ১১ জানুয়ারি রাতে সন্ত্রাসী নাসির বাহিনী জামায়েত কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এর প্রেক্ষিতে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষের ব্যক্তিবর্গ নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে একটি সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করেন। জামায়াতকর্মীরা উক্ত বৈঠকের জন্য স্কুল প্রাঙ্গনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই আগে থেকে ওৎপেতে থাকা নাসির এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জামায়াত কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোকন মোল্লা নামে একজন কর্মী শাহাদাত বরণ করেন।
বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজাউদ্দিন জোয়াদ্দর বলেন, নাসির এলাকায় নেতৃত্ব দেয়। ইনুর নির্বাচন করেছে। সেটা আমরা জানি। কিন্তু কোন পদ পদবীতে আছে সেটা আমার জানা নেই।
এদিকে বিএনপির সাথে দ্বন্দ্ব মানতে নারাজ মিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহমত আলী রব্বান। তিনি বলেন, নাসির এক সময় ছাত্রদল করতো। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হলে জাসদে চলে যায়। ২০১৮ সালের ইনুর সাথে সে(নাসির) নির্বাচন করে। এবং ইনুর সাথে তার অনেক ছবিও রয়েছে। এরপর থেকে তিনি আর বিএনপি করেনি। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আমাদের কিছু স্বার্থান্বেষী নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ছত্রছায়ায় চলছে নাসির। সে কোন বিএনপি কিংবা অঙ্গ সংগঠনের পদে নেই। তাছাড়া এটা বিএনপির সাথে কোন দ্বন্দ্ব নয়।
জানা গেছে, জামায়াতের এমন বিবৃতির প্রতিবাদ ও ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে গত মঙ্গলবার সকালে আমলা ইউনিয়ন বিএনপির অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন রাশেদ মাহমুদ নাসির। সেই সংবাদ সম্মেলনে আমলা ও সদরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রওশন আলী বলেন,বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়নি। জামায়াত-শিবিরের লোকজন বিএনপির লোকজনকে প্রতিহত করতে হামলা চালিয়েছে।
সদরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন,আমরা হটকারী কোন সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী না। বিএনপি ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি করে না।
ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে বিএনপি কর্মী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা দাবি করে রাশেদ মাহমুদ নাসির বলেন, আমি বিএনপির প্রোডাক্ট। টানা দশ বছর আমলা সরকারী কলেজে ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম,ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। সেটা আমার জেলার নেতারাও জানে। সুতরাং জাসদের সাথে আমার সম্পর্কের অভিযোগ বানোয়াট। তিনি হামলায় জামায়াত-শিবিরকে দায়ি করে বলেন,অতর্কিত হামলায় আমিসহ ১০ থেকে ১৫জন বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমার নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা জাসদের সভাপতি আহম্মদ আলী মুঠোফোনে বলেন,নাসির কখনও জাসদের সাথে রাজনীতি করেনি। সে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এলাকাগত সম্পর্কের বাইরে জাসদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,মিরপুর উপজেলা বিএনপির দুইটি পক্ষের মধে্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। একাংশের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক ও আরেক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহমত আলী রব্বান। সম্প্রতি দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এরপর উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। নাসির সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হকের সমর্থক।
এদিকে জামায়াত কর্মী মৃত্যুর ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম ঢাকা জার্নালকে বলেন, আমলা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির নাসিম রেজা মুকুল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।