চুরি হওয়া মালামাল হেফাজতে রাখা অবস্থায় আবারো চুরি
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি রাস্তার কাজে ব্যবহৃত বিটুমিন চুরি করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন আগে রাতে উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম মো. আলামিন হোসেন ও গ্রাম পুলিশ সদস্যের নাম হান্নান। আলামিন উধুনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি উধুনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তোরাব আলী বলেন, বিটুমিনের ড্রাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হারিয়ে হওয়ার পর ওই দিন পরিষদে যে গ্রাম পুলিশ দায়িত্বে ছিলো আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি। পরে গ্রাম পুলিশ হান্নান ইউপি সদস্য আলামিনের কথা স্বীকার করেন। এবং বলে আলামিন পরিষদ থেকে ৬ টি বিটুমিনের ডাম নিয়ে চলে গেছে। ইউপি সদস্য তোরাব আলী আরো জানান, রাস্তার কাজে ব্যবহৃত ৬ টি বিটুমিনের ড্রাম ইউপি সদস্য আলামিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চুরি করে নিয়ে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা আলামিনের শাস্তি দাবি করছি।
সংরক্ষিত ৪,৫,৬ ওয়ার্ডের নারী সদস্য আসমা খাতুন জানান, বেশ কিছুদিন আগে চুরি হওয়া ৬ টি বিটুমিনের ড্রাম উদ্ধার করে গ্রাম পুলিশ। পরবর্তীতে উদ্ধার হওয়া বিটুমিনের ড্রাম গুলো ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেগুলো এখন দেখ যাচ্ছে না। কে বা কাহার চুরি করে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ চুরি হওয়া মাল উদ্ধার করে রাখার পর আবার চুরি হয়ে গেছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে গ্রাম পুলিশ হান্নানের মাধ্যমে চুরি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ হান্নানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিগত দুই থেকে আড়াই মাস আগে বর্ষা মৌসুমে আমরা জানতে পারি আমাদের উধুনিয়া ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে সরকারি রাস্তার কাজে ব্যবহৃত
৬ টি বিটুমিনের ড্রাম নিয়ে কয়েক জনের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা কয়েক জন গ্রাম পুলিশ সেখানে গিয়ে তার সতত্যা পাই। এমনকি ওই মালের সাথে যে ছিলো তার কথার গড়মিল পাওয়া গেলে আমরা সেখান থেকে ৬ টি বিটুমিনের ড্রাম উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখি। এবং সেই সময়ের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করা হয়।।এমনকি ওই মাল নিয়ে আশার পর থেকেই ইউপি সদস্য আলামিন আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এবং বিটুমিনের ড্রাম গুলো আমাকে ফেরত দিতে বলে। পরবর্তীতে আমি ফেরত না দিলে সে হুমকি-ধামকিও দেয়। গত মঙ্গলবার আমি ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বে থাকা কালিন ইউপি সদস্য আলামিন হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়ে বলে রাস্তার কাজের ঠিকাদারের লোক গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে বিটুমিনের ড্রাম গুলো যেন তুলে দেই। পরবর্তী গাড়ি সহ লোকজন এসে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মালগুলো নিয়ে যায়। এরপর সেগুলো কি করছে এ বিষয়ে আমার আর জানা নেই।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আলামিন বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন রাজনৈতিক দল করায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে খুব দ্রুতই এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সামছুল আলম জানান, বিগত কয়েক মাস আগে চুরি হওয়া মাল উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছিল। তবে কয়েকদিন হলো সেগুলো এখন আর নেই। জানা যাচ্ছে পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্য নাকি সেগুলো নিয়ে গেছে। তবে উর্ধতনের অনুমতি ক্রমে খুব দ্রুতই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হবে।
উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সামসুল হক বলেন,বিষয়টি জানার পরে আমি তৎকালীন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জেনেছি গত বর্ষা মৌসুমে কয়েক জন গ্রাম পুলিশ চুরি হওয়া ৬ ড্রাম বিটুমিন উদ্ধার করে পরিষদে রেখেছিল। কিন্তু গত কয়দিন হলো সেগুলো এখন নেই। তবে যদি কেউ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মালামাল গুলো নিয়ে বিক্রি করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বর্ষা মৌসুমে এই ৬ ড্রাম চুরি হওয়া বিটুমিন উদ্ধার করে উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ। পরবর্তীতে সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদ হেফাজতে রাখা হয়। হেফাজত থাকা অবস্থায় আবারো সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। লাগাতার এমন অপকর্মের সাহসের উৎস জোগায় কে বা কারা এই নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।