আমেরিকানদের সুখ!
আমি প্রতিদিন কোন না কোন আমেরিকানের সাথে কথা বলি। ওদের সাথে কথা বলে একটা জিনিস বুঝি, ওদের মাঝে কোন হতাশা নেই। কোন চিন্তা নেই। হয়তো ভেতরে ভেতরে অনেকের থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের যতো চিন্তার একক, অর্থাৎ আমরা যেসব কারনে দুশ্চিন্তা করি। যেমন, পরিবার, চাকরি, ভবিষ্যৎ, টাকা, বেতন, খরচ,বাজারদর কিংবা আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান। এসব কোনকিছু নিয়ে আমি ওদের ভাবতে দেখি না।
পরিবার নিয়ে তারা বেশ আনন্দে সময় কাটায়। ছুটির দিনে ঘুরতে যায়, বাচ্চাদের পছন্দের দাম দেয়।
চাকরি নিয়ে হতাশা নেই, এখানে যদিও কাজের অভাব নেই। আমার এক ব্যাংকার বন্ধু, ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার লেভেলের। দারুণ অফিস, দারুণ কাজ। দুইদিন পর শুনি সে ব্যাংকের কাজ ছেড়ে পোস্ট অফিসে কাজ করছে। মানে পুরো ট্রেক পরিবর্তন। আরেক বন্ধু দোকানে কাজ করতো হুট করে শুনি আর্মিতে যোগ দিয়েছে। মানে ওদের চাকরি নিয়ে কোন চিন্তাই নাই। অনেককে দেখেছি তিনমাস কাজ করে দুইমাস ছুটি কাটায়। যদিও এখানে কাজের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক আছে। যেটা নিয়ে আমাদের সাথে তুলনা হয় না। মোদ্দা কথা ওদের স্যাটিসফেকশন কাজ করে।
ভবিষ্যৎ নিয়েও ওরা এতো উদ্বিগ্ন না। যা আছে তাই নিয়ে খুশি। যে যেখানে আছে সেখানেই হ্যাপি। যে গ্রামে ফার্ম হাউজে আছে সে লস এঞ্জেলেস বা নিউ ইয়র্ক নিয়ে হতাশায় ভোগে না। অথচ আমাদের হতাশা, কেনো এতো গরম, কেনো ঠাণ্ডা, কেনো বড় বাড়ি নাই, দামি গাড়ি না ফ্ল্যাট নাই। সন্তানের পড়াশোনার স্কুল কেনো ভিকারুননিসা বা রাজউক না। ব্লা ব্লা ব্লা।
তারা যেটা নিয়ে ভাবে বা যেটা নিয়ে সচেতন সেটা হলো বাজারের দাম। আগেই বলেছি তারা যে পরিমাণের পারিশ্রমিক পায় এতে এসব নিয়ে ভাবার কথা না। অথচ তারা ঠিকই গ্যাসের দাম বা তেলের দাম বেড়ে গেলে কথা বলে। চিন্তা করে পরেরবার এই সরকারকে আর সুযোগ দেবো না।
এদের মাঝে যে কী পরিমাণ ইথিক্স আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। অনেকেই অনেক খারাপ উদাহরণ দিতেই পারেন। আমি সামগ্রিক কথা বলছি। এরা সবাই সবাইকে প্রশংসা করে। পেছন থেকে কেউ কাউকে টেনে ধরে না।
আমার দোকানে আমি টি শার্ট বিক্রি করি। মানে কাস্টোমাইজ করি। পাশের দোকানগুলোতে যদি কোন নির্দিষ্ট টি-শার্ট না পায় ওরা আমার দোকানে পাঠিয়ে দেয়। এসব চর্চা কি আমাদের দেশের ব্যাবসায়ীদের মাঝে আছে? ওরা তো বলেই বেড়ায় এই জিনিস এই মার্কেটে আর কারোও দোকানে পাবেন না। অন্য কোন দোকান থেকে কিনলে পাশের দোকানদার বলে ঠকে গেছেন।
আমার দোকানে কখনো কোন কাস্টমার এলে যদি গুগল থেকে ছবি নামিয়ে প্রিন্ট করিয়ে দেই তার আগে জিজ্ঞেস করে কপিরাইটের কোন ঝামেলা হবে কিনা। ভাবা যায়! আমাদের দেশে কেউ কি গুগলের একটা ছবি ডাউনলোড করে সেটা টি-শার্ট বা অন্য কোথাও প্রিন্ট করলে একজনও কি ভাববে এটা কপিরাইটে এক ধরনের অন্যায়ের কাজ কিনা। অথচ এখানে প্রতি দশজনের অন্তত ৮ জন জিজ্ঞেস করেন। নিয়ম অনুযায়ী একটা সমাধানও দেই। আমরা তো একটা সিনেমা আসলে তার পরদিনই তার কপি নেটে পেয়ে যাই। যে যেভাবে পারে নৈতিকতা বিসর্জন দেই। স্কুলে শেখায় না,পরিবারে শেখায় না। সমাজের বা রাষ্ট্রের কথা বাদই দিলাম।
ওরা এজন্যই হয়তো হ্যাপি, এজন্যই সুখি। আর আমরা দুশ্চিন্তায় চুল পাকিয়ে ফেলি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক
Comments