পেঁয়াজের ‘ঝাঁঝ’ কমছে না

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৩

Onion[1]
ঢাকা জার্নাল: বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি থাকলেও কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁঝ। রাজধানীতে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বিকোচ্ছে ৫৮ থেকে ৭০ টাকায়, আর খুচরায় ৮০।
চরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পূজার কারণে ‘ইচ্ছে করেই’ বড় ব্যবসায়ীরা দাম ধরে রাখছেন।

ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর ফলে মাস খানেক আগে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে, যা এক পর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির উদ্যোগ নেয়। এজন্য বন্দর ও শুল্ক কর্তৃপক্ষকে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ছাড় করার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়।

সবশেষে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমিয়ে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে এলসি সীমাও কম রাখতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে এত কিছুর পরও প্রভাব নেই বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিকারক ও বড় ব্যবসায়ীরা ঈদ ও দুর্গা পূঁজার অতিরিক্ত চাহিদাকেই কাজে লাগানোর জন্যই এ অবস্থা তৈরি করে রেখেছেন।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম একটু কমেছে। তবে খুব বেশি কমার সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ দেশের মোকামগুলোতে দাম কমছে না, আবার আমদানিকারকরা পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ দাম ওঠানামাকে দায়ী করে পেঁয়াজের দাম ধরে রাখছে।

“মূলত বড় ব্যবসায়ীরা সামনে ঈদ ও পূজার অতিরিক্ত চাহিদাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এজন্য সরকার বাজারে যতোই পেঁয়াজ সরবরাহ করুক, আর আমদানিতে সহায়তা করুক তাতে বাজার ঠিক হবে না।”

পাবনার সাথিয়ার বেড়া মোকামের এলাহী বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন টেলিফোনে জানান, “মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহের খুব একটা হেরফের হয়নি। প্রতি মণ পেঁয়াজ ২৪৫০ টাকা থেকে ২৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।”

নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম এরকম থাকবে বলেই মনে করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর কৃষি পণ্য আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরাই পেঁয়াজ আমদানি করছেন। প্রতিদিন গড়ে ২০ গাড়ি পেঁয়াজ আসছে। তবে চীন ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।”

ভারতে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বাংলাদেশি সাড়ে ১৬ টাকা কমেছে জানিয়ে খন্দকার বাবুল বলেন, নতুন দামের এসব পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম আরো কমবে।

সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, “এ পর্যন্ত ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫০০ টন বিক্রি শেষ হয়েছে। আর ৩০০ টনের আরেকটি লট বন্দরে এসে পৌছেছে। বন্দর থেকে খালাসের সাথে সাথে এসব পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হবে।”

সংস্থাটি সারা দেশে ১৬০টি ট্রাকে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।

এদিকে রসুন ও শুকনো মরিচের দামও কিছুটা বেড়েছে। কমেছে ভোজ্যতেল ও আদার দাম। কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি শুকনো মরিচ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা দরে বিকিয়েছে।

আর রসুন বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।

নতুন আদা বাজারে আসায় পণ্যটির দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দরে প্রতি কেজি আদা পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১১০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।

অন্যদিকে খোলা ও বোতলজাত উভয় ধরনের ভোজ্যতেলেরই দাম কমেছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৬ টাকা পর্যন্ত দরে। এক লিটার বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে কোম্পানিভেদে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

গত সপ্তাহে ১১৭ থেকে ১২৫ টাকা দরে কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। আর ৫ লিটারের বোতলে দাম কমেছে প্রায় ১৫ টাকা। তবে পাম অয়েলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.