সরকারের কারণে জাতিসংঘের উদ্যোগ ব্যর্থ: ফখরুল

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৩

image_547_123275

দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘ সংলাপের প্রস্তাব দিলেও আওয়ামী লীগের সাড়া না মেলায় তা হয়নি বলে দাবি করেছে বিরোধী দল বিএনপি।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন গত ২৫ অগাস্ট টেলিফোনে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। সংকট নিরসনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুইজন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানেরও প্রস্তাব করেন।

“আমাদের নেত্রী ওই প্রস্তাবে আপত্তি নেই বলে মহাসচিবকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ফার্নান্দেজ তারাঙ্কো আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে জানিয়েছেন, ওই মিটিংয়ের প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ সাড়া দেয়নি।”

ক্ষমতাসীন দলের এ মনোভাবের কারণেই জাতিসংঘ মহাসচিবের সংলাপের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, জাতিসংঘে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে যে মন্তব্য বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন করেছেন- তা সঠিক নয়।

“তিনি সঠিক কথা না বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। মোমেন সাহেব সঠিকভাবে বিষয়টি জাতির কাছে তুলে ধরেননি।’’

দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “আমরা এখনো আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা চলতি সংসদ অধিবেশনেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের একটি বিল নিয়ে আসবেন।’’

আর তা না হলে ২৪ অক্টোবর সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পর দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তার দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মুখোমুখী অবস্থানের মধ্যেই গত ২৫ আগস্ট টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জাতিসংঘ মহসচিব বান কি-মুন ।

এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে চিঠি দেন। খালেদা গত ১৮ সেপ্টেম্বর জন কেরির চিঠির জবাব পাঠান।
সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।

সংবিধান অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, যা নিয়ে বিরোধী দলের আপত্তি।

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিরাট বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ গেছেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমরা আশা করি, চলমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেবেন। সংকট সমাধানে তারা আন্তরিক হবেন।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান সংকট সমাধানে উদ্যোগের কথা বলবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “জাতি প্রত্যাশা করে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সরকার ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”

বিএনপি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে বিল উত্থাপন করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আর সংসদে আলোচনার প্রয়োজন বা যৌক্তিকতা আছে বলে তার দল মনে করে না।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বিএনপি সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনে বার বার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও তার সঙ্গে ছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.