পুর্নবাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন সাভার দুর্ঘটনায় পঙ্গু শ্রমিকরা

মে ১৯, ২০১৩

2013-05-12-16-40-52-518fc6148f1a5-untitled-16ঢাকা জার্নাল: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সাভারে শিল্প দুর্ঘটনায় যে শত শত মানুষ শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন, তাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অবস্থায় বের হয়ে আসতে পারলেও এরা শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে।

গত কয়েক সপ্তাহে সরকার এবং বহু দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এদের পুনর্বাসনে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় আহত অসংখ্য শ্রমিক যারা দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন, তাদের পরিবারগুলো পড়েছে গভীর অনিশ্চয়তায়।

তবে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে কোন শ্রমিককেই যেন অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয় সেটি তারা নিশ্চিত করবেন প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে।

সাভারে গত ২৪শে এপ্রিল নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিলো ১১২৭ জনের। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ যাদের অধিকাংশই ওই ভবনের থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। এদের মধ্যে গুরুতর আহতদের অনেকেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাজধানী ঢাকা ও সাভারের হাসপাতালগুলোতে, যাদের অনেককেই জীবন বাঁচাতে পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই শ্রমিকদের অনেকেই ছিলেন তাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস আর তাই অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি তারা অন্ধকার দেখছেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই। আহতদের কেউ কেউ বলেছেন, চিকিৎসা সেবা ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানা সহায়তা তারা পেয়েছেন। তবে তারা মনে করছেন এ ধরনের ব্যক্তি উদ্যোগে আসা সহায়তা বেশি দিন পাওয়া যাবেনা। তাই ভবিষ্যতে চিকিৎসার বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড়াও পরিবারের ভরন পোষণ হবে কীভাবে তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।

হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করা একজন শ্রমিক বলেন, “অনেক কষ্ট ভাই। হাত আর পা গেছে। কথা বলতেও সমস্যা হয়। কি করে খাব জানিনা। ডান হাত আর ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। সুস্থ হয়েও তো কিছু করতে পারবো না। আমাকে তো একটা উপায় করে দিতে হবে। সেগুলো কেউ কিছু বলেনি এখনো আমাকে।”

আরেকজন শ্রমিক বলেন, “জানিনা, উপরওয়ালার ইচ্ছা কীভাবে চলবে সংসার।”

অপর একজন শ্রমিক বলেন, “উঠতে বসতে এমনকী শুয়ে থাকতেও পারিনা। সংসার কীভাবে চলবে কেউ কিছু বলেনি”।

তবে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে সরকার, এনজিও, ও বিদেশি ক্রেতাদের ফোরাম সবাইকে নিয়েই তারা একটি সমন্বিত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছেন যাতে যার যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটি নিশ্চিত করা হবে।

সংগঠনটির সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, ৩০০ র বেশি গুরুতর আহত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে বিজিএমএই সেটি করবে।

রিয়াজ মাহমুদ বলেন, “ যারা চাকুরির উপযুক্ত তাদের অন্য কারখানায় চাকুরির ব্যবস্থা করছি। যাতে শ্রমিকদের অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয় তার জন্য একটা ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা করা হবে।”

যারা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যাবেন তাদের কি হবে, এমন প্রশ্নে- রিয়াজ মাহমুদ বলেন, “তাদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করবো।”

তিনি জানান, প্রায় সাড়ে তিনশ জনের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের প্রয়োজন হবে এবং সেজন্য বিজিএমইএ- সরকার, এনজিও এবং বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে।

এদিকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধার তৎপরতার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন আহত ব্যক্তিদের চূড়ান্ত কোন তালিকা করতে পারেনি।

তবে অঙ্গহানি বা গুরুতর আহত হয়েছেন এমন ৭২ জন ব্যক্তির নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে।

সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্লা বলেছেন, এতদিন উদ্ধার তৎপরতা ও নিহতদের নিয়ে সবাই সর্বাত্মক কাজ করেছে। এখন তারা আহতদের বিষয়ে সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করছেন। সাভারের বাইরের হাসপাতালগুলো থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কামরুল হাসান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আহতদের নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.