নারী নীতি বাস্তবায়নে আরো এক ধাপ এগুলো বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৩

ঢাকা: নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নে আরও একধাপ এগুলো বাংলাদেশ। এ নীতি বাস্তবায়নে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১২ চূড়ান্ত করেছে সরকার।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত বিধিমালা বিজি প্রেসে পাঠানো হবে। আর বিধিমালাটি ছাপা হলেই ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যক্রম শুরু করবে সরকার।

আইনে পারিবারিক সহিংসতার কয়েকটি ক্ষেত্র বিধিমালা দিয়ে নির্ধারণ করা ছিল। এ কারণে আইন পাস হওয়ার পরেও বিধিমালা তৈরি না হওয়ায় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ বাস্তায়ন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

তবে, ২০১০ সালে আইন পাসের পর শেষ পর্যন্ত বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। এরফলে বিধিমালা দিয়ে নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোতে আর বিচারিক কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না।

তিনি আরও জানান, প্রজ্ঞাপন জারি হলেই ফেব্রুয়ারি থেকেই এর কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মন্ত্রণালয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবে।

তিনি আরও জানান, আইন বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ে প্রতিরোধ ও মনিটরিং কমিটি গঠন করবে। কমিটিতে জন প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখা হবে। কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণও করবে মন্ত্রণালয়।

আইনে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০) অপরাধ প্রমাণ হলে অপরাধীর অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। তবে সশ্রম না বিনাশ্রম তা বলা নেই আইনে। নতুন এ বিধিমালায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, সুরক্ষা আদেশ প্রথমবার লঙ্ঘন করলে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে সশ্রম কারাদণ্ড হবে।

বিধিমালায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের পদ্ধতি, আদালতের নোটিশ ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পদ্ধতি, সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ পদ্ধতি, পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কর্তব্যসহ ১৫টি বিষয়ের কার্যপদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

বিধিমালায় আইনের ৩১ (৩) উপধারা (১) ও (২) এর আলোকে ক্ষতিগ্রস্ত নরীর প্রাপ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, আদালত কোনো সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা দিতে প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। আর এ কাজের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের ন্যায়সঙ্গত অংশ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমতে তার সন্তানদের দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।

বিধিমালায় অর্থদণ্ড হিসেবে আদায় করা অর্থ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমতে তার সন্তান বা তার ওপর নির্ভরশীলদের দেওয়ার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য যে সব ক্ষেত্র বিধিমালা দিয়ে নির্ধারণ করা ছিলো সেগুলো বিস্তারিতভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে বিধিমালায়।

জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এর সাক্ষরকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। সাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এবং নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়।

এস এম আব্বাস, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.