মরক্কোয় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫০০ ধ্বংসস্তূপে প্রাণের সন্ধানে উদ্ধারকারীরা

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় ভারী যন্ত্রপাতির পাশাপাশি খালি হাতেই উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন মানুষ। ভূমিকম্পে আল-হাউজ প্রদেশের দুটি গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক মানুষ চাপা আছেন বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবারের ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি মারাকেশ শহরের ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে আঘাত হানে। এতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করছে দেশটির সরকার। আহত আছেন ২ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। রবিবার একই অঞ্চলটি ৪ দশমিক ৫ মাত্রার একটি পরাঘাতে ফের কেঁপে ওঠে।

এএফপি বলছে, ভূমিকম্পের পর মারাকেশ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তাফেঘাঘতে পাহাড়ি গ্রামটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি ভবন এখন দাঁড়িয়ে আছে। মরক্কোর সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

গ্রামের ৬২ বছরের বাসিন্দা জাহরা বেনব্রিক তার ১৮ জন স্বজনকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবাই চলে গেছে! আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। আমার ভাইয়ের সন্ধান এখনও পাইনি। আমি ওর মরদেহ চাই, যেনো শান্তিতে শোক করতে পারি।’

তাফেঘাঘটের কাছে আমিজমিজ গ্রামও ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের হচ্ছে একের পর এক মরদেহ।

দুটি গ্রাম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল আল-হাউজ প্রদেশে অবস্থিত। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই দুই গ্রাম থেকে এক হাজার ৩৫১ জনের মরদেহ এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। প্রদেশের অন্তত ১৮ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মরক্কোর এমন বিপর্যয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে স্পেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৫৬ জন উদ্ধারকর্মীর সঙ্গে চারটি কুকুরসহ একটি বিমান উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে মরক্কোয় পাঠানো হয়েছে।

স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবেলস বলেন, ‘আমরা যা যা প্রয়োজন সব পাঠাবো। শুরুর সময়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে জীবিত থাকতে পারে।’

স্পেন ছাড়াও ব্রিটেন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সহায়তা পেয়েছে মরক্কো সরকার। আরও অনেক দেশ এবং সংস্থা সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর সুবিধার্থে দীর্ঘ দিনের বৈরিতা ভুলে আকাশ সীমা খুলে দিয়েছে প্রতিবেশী আলজেরিয়া।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘সব ধরনের প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা দলকে পাঠাতে প্রস্তত আছি আমরা। মরক্কোর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে আমরা সহায়তা পাঠাতে দেরি করবো না।’

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কমিশনও প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এদিকে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে রেড ক্রস। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার পরিচালক হোসাম এলশারকাউই বলেন, ‘এটা আসলে এক বা দুই সপ্তাহের বিষয়। যদি সবাই দ্রুত হস্তক্ষেপ করে তবে বছর না হলেও অনেক মাস সময় লাগবে ঘুরে দাঁড়াতে।’

১৯৬০ সালের পর শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মরক্কোর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। সে বছর ভূমিকম্পে উপকূলীয় শহর আগাদিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ৬৩ বছর আগের ওই বিপর্যয়ে প্রাণ হারান ১২ হাজারের বেশি মানুষ।