শুভ বড়দিন: সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য আরও সুদৃঢ় হোক

ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬

ঢাকা জার্নাল : ২৫ ডিসেম্বর। যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন। এ দিনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য জন্ম নিয়েছিলেন যীশু খ্রিস্ট। তাই প্রতি বছরের এ দিনটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়।

সারা বিশ্বের মতো উৎসবটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করবে বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও। এ উপলক্ষে উৎসবের সাজে সেজেছে বিভিন্ন বাড়ি-ঘর আর গির্জা। দেশের গির্জাগুলোতে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বড়-বড় হোটেল রেস্তোঁরাগুলোতেও রয়েছে বড়দিনের পার্টির আয়োজন।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আদি গ্রন্থ বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বেথলেহেম শহরে কুমারী মেরির গর্ভে জন্ম নেন যীশু খ্রিস্ট। প্রচলিত তথ্য মতে, একটি আস্তাবল বা গোয়াল ঘরে জন্ম নেন যীশু। তবে বাইবেলের উপাখ্যানে আস্তাবল বা গবাদিপশুর ঘরে জন্ম নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই।

বিভিন্ন দেশের খ্রিস্টানরা বিভিন্ন রকমভাবে বড়দিন উদযাপন করেন। তবে এসবের মধ্যে গির্জায় প্রার্থনা সবেচেয়ে প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হিসেবে বিবেচিত। বড়দিনের সর্বশেষ প্রস্তুতিটি নেওয়া হয় ক্রিস্টমাস পূর্বসন্ধ্যায়।

এ সময় সুদীর্ঘ ইতিহাস উল্লেখ করার মাধ্যমে যীশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এসব চিত্রে মেরি, জোসেফ, শিশু যীশু, স্বর্গদূত, মেষপালক এবং বেথলেহেমের সেই সময়কার দৃশ্যপট তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।

ঢাকার হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন, ওয়েস্টিন, লা মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোঁরা নানা আয়োজনে এ দিনটিকে সাজিয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন ক্যাথলিক গির্জা, আসাদগেট সেন্ট খ্রিস্টিনা গির্জা, রমনা সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল গির্জা, লহ্মীবাজার পবিত্র ক্রুশের গির্জা, তেজগাঁও জপমালা রানির গির্জায়সহ সাখানেই দেখা গেছে উৎসবের আমেজ।

তবে এবার নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আর তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চৌকি পেরুতে হবে বড়দিনের অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের।

এদিকে, বড়দিন উপলক্ষে দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সব ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখারও আহবান জানান।

বড়দিন উপলক্ষে দেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে রাষ্ট্রপতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে এ পৃথিবীতে মহামতি যীশু খ্রিস্টের আবির্ভাব ছিল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি ছিলেন মুক্তির দূত, আলোর দিশারী। পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করে যীশুখ্রিস্ট সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারসহ খ্রিস্টধর্মের সুমহান বাণী প্রচার করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘যীশু খ্রিস্ট পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান জানান। যীশুর মতে মানুষের পরিত্রাণের উপায় হলো জগতের মাঝে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থান। পূর্ণ অন্তর, মন ও শক্তি দিয়ে তিনি ঈশ্বর ও সব মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এ সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কাল ধরে। এখানে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। যারা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে এই ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে রয়েছে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা।

বড়দিনকে পূণ্যদিন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বড়দিন উপলক্ষে এ সম্প্রদায়ের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বড়দিন দেশের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিদ্যমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে।

প্রধানমন্ত্রী আনন্দময় ও উৎসবমুখর বড়দিনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জনসাধারণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এদিকে, বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও। শনিবার এক বাণীতে তিনি বলেন, সত্য, ন্যায় ও করুণার পথ প্রদর্শক মহান যীশু খৃস্ট এদিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বের সব খৃস্ট ধর্মাবলম্বীর কাছে তাই এ দিনটি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ।

খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য দেশ, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া। হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অন্যায় অবিচার প্রতিরোধে ব্রতী হওয়া সবার কর্তব্য।

তিনি বলেন, মহামানবদের জীবন দর্শন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই মানবকল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব। আর তাহলেই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে আমরা সক্ষম হবো।

বড়দিনের সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

ধর্ম-বর্ণ দল, মত ও পথ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক। সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য আরও সুদৃঢ় হোক বড়দিনে এটাই সবার প্রত্যাশা।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.