দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা ঢুকছে: বিজিবি মহাপরিচালক

নভেম্বর ২৫, ২০১৬

coxbazar-bgb-dgঢাকা জার্নাল : কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ঘুরে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, দালালদের মাধ‌্যমে কয়েকটি এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) টেকনাফ স্থলবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কিছু রোহিঙ্গা নাফ নদীসহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বিজিবির একার পক্ষে ৬৩ কিলোমিটার জল সীমান্তসহ ২৭১ কিলোমিটার জলপথের শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।

“যেসব স্থলপথে বিজিবি টহল দিতে পারছে না সেসব পয়েন্ট দিয়ে কিছু দালাল চক্রের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকাচ্ছে। এটি অস্বীকার করার অবকাশ নেই।”

সীমান্তের উভয় পারেই ‘দালাল’ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে সেরকম কয়েকটি চিহ্নিত করে বিজিবির বাড়তি নজরদারির ব‌্যবস্থা করা হয়েছে।

তবে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে তার পরিসংখ্যান বিজিবির কাছে নেই বলে জানান আবুল হোসেন।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব‌্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে বিজিপি ছাউনিতে হামলা হয় বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যমের খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সুতরাং এখানে দেশি-বিদেশি কোনো সন্ত্রাসীর অপতৎপরতা চালানোর কোনো সুযোগ নেই।

“আমরা কারো শত্রু নই, সীমান্তের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা গুলিবিদ্ধ দুজনকে আটক করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিজিপির কাছে হস্তান্তর করেছি।”

বিজিবি মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমের ওই খবরের শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানান আবুল হোসেন।

বিপদাপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহাপরিচালক বলেন, “এটি বিশ্বায়নের যুগ। কোনো কিছু গোপন করার সুযোগ নেই। মিয়ানমারে কী হচ্ছে, এটি বিশ্ববাসী দেখছে। এরপরও অনুপ্রবেশে বাধা দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সময় বিজিবি তাদের সকল ধরনের মানবিক সহযোগিতা দিচ্ছে।”

অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, এ সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চিন্তা করছে। বিজিবির কাজ হচ্ছে সীমান্ত পাহারা দেওয়া। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছে। তবুও অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হয় না। এরপরও বর্তমান সরকার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, সড়ক ও টাওয়ার স্থাপনের চিন্তা করছে। তবে এটি সহসা সম্ভব নয়।
“আমরা সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক দিয়ে সীমান্ত সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চালাই। গত দুদিন ধরে আমি স্থল ও জলসীমান্ত পরিদর্শন করেছি।”

সম্প্রতি কক্সবাজারে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বিজিবির আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে চোরাচালানসহ সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মতি আসে বলে জানান তিনি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের ‘মালঞ্চ’ কটেজ প্রাঙ্গণে বিজিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান, কক্সবাজার সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান, টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ, টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলমসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার এসে স্থলপথে উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত এবং শুক্রবার সকালে স্পিড বোটে নাফ নদী দিয়ে টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।

বিকালে তিনি সড়কপথে কক্সবাজারের উদ্দেশে টেকনাফ ত্যাগ করেন।

গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়।

ওই অভিযানে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এছাড়া রাখাইন অঞ্চলে সহস্রাধিক ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে। সূত্র- বিডিনিউজ।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ২৫, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.