কারো কাছে মাথানত করবো না

মার্চ ২৭, ২০১৬

PM_Hasinaঢাকা জার্নাল: আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। কারো কাছে মাথানত করবো না। ভিক্ষা করবো না। নিজেদের আয়-সামর্থ্য দিয়ে চলবো বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

নিজের পয়সায় ডাল আর মোটা চালের ভাত খাবো, ভিক্ষা করে বিরানি খাবো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য এতো আত্মত্যাগ, এতো রক্ত আর কোনো জাতি দেয়নি- যা বাঙালিকে দিতে হয়েছে। এতো রক্তদান বৃথা যেতে পারে না, বৃথা যেতে দেবোও না। উন্নত-সমৃদ্ধ ও সুখী-সুন্দর দেশ গড়ে আমরা স্বাধীনতার মর্যাদা রাখবো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলে এ উন্নত দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশবাসীকে আহ্বান জানান তিনি।

শেথ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার জন্য ১৯৪৮ সালেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা অর্জনের জন্য ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এরপর থেকেই ধাপে ধাপে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামের দিকে নিয়ে গিয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করে দিয়েছেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয় ও সরকার গঠনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ দল ছেড়ে দেয় মন্ত্রিত্বের লোভে আর বঙ্গবন্ধু দল গঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই বাঙালি জাতি একত্রিত হয়েছে, তখনই তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আর আমাদের ভেতরেই কিছু মানুষ ষড়যন্ত্রে সহায়তা দিয়েছে।

বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বায়ান্ন সালে মুক্তি পেতে না পেতে ১৯৫৪ সালে, ১৯৫৮ সালে গ্রেফতার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কতোবার গ্রেফতার হয়েছেন, কিন্তু তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেননি।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করলে তা পুরো জাতির মাঝে আলোড়ন তোলে। এ ছয় দফা ছিলো বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফা দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান, ১৯৬৯ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার প্রস্তুতি তিনি সে সময়ই নিয়েছেন। যুদ্ধ হলে আমাদের দেশের মানুষ কোথায় প্রশিক্ষণ পাবে, গেরিলা যুদ্ধ হলে অস্ত্র কোথায় পাওয়া যাবে, সব তিনি পরিকল্পনা করে এসেছিলেন।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন। তিনি সব সময় একটি নির্বাচন চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। ভোটের আগে ‘ভাত দে’ স্লোগান দিয়েছেন।
এ বিপুল জনপ্রিয়তার অর্জন করে বঙ্গবন্ধু যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, পৃথিবীর কোনো নেতা এমন আন্দোলনের ডাক দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন, কি কি করতে হবে। দেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানা যাবে। রাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানা খুব দরকার। বইটি পড়লে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু কিভাবে ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সত্তরের ম্যান্ডেট আর জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন বঙ্গবন্ধুকে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছিল। তাকে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণারও ক্ষমতা দিয়েছিল এদেশের মানুষ। অনেকেই প্রশ্ন করেন, তিনি ৭ মার্চ কেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি? আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা ধরতে পারেনি। তিনি এমনভাবে দিয়েছিলেন, পাকিস্তানিরা বুঝতে না পারলেও বাঙালি জাতির কাছে ঠিকই তথ্য পৌঁছে গেছে।

‘২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলো বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বলেই স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ভারতীয় সেনারা দেশে ফিরে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি আর কখনো ঘটেনি যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা দেওয়া মিত্র বাহিনী কোনো দেশ ছেড়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে গেছে’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভারতীয় সৈন্য আমাদের মিত্রবাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করেছে। অনেক সৈন্য মারা গেছে। কিন্তু মিত্রবাহিনী এ দেশে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেনি। বঙ্গবন্ধুর মতো স্বাধীনচেতা নেতা ছিলো বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কথা ছিলো মিত্রবাহিনী প্রত্যাহার করা প্রসঙ্গে। তিনি কথা শুনেছিলেন।

‘মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন জাতির পিতা। এতো অল্প সময়ে তিনি একটি সংবিধান দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান করেছেন। নির্বাচন করেছেন। স্থলসীমানা চুক্তি, সমুদ্রসীমা আইন করেছেন। ওআইসি থেকে শুরু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। নগদ টাকা দিয়ে তিনি গ্যাস কিনে নিয়েছিলেন। এতো অল্প সময়ে তিনি এতো কাজ করেছিলেন, কারণ’ স্বাধীনতা ও তা অর্জনের পর দেশ গঠনের বিষয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন।

বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময় তার অনুপস্থিতিতে আমার মা দল ও নেতাকর্মীদের আশ্রয় ও দিক-নির্দেশনা দিতেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, নীরবে-নিভৃতে আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এদেশের মুক্তির জন্য অবদান রেখে গেছেন। স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের বিরাট অবদান ছিলো। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, সেসব দেখা শোনা করার পাশাপাশি আন্দোলন সংগঠিত করার কাজও তিনি করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের মুক্তি দিয়ে তাদেরকেই মন্ত্রী করেন। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করেন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শাল ও ফাঁসির নামে হত্যা করেন। অনেককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা-গুম করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেন। ফলে এদেশের একটা প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি।

পঁচাত্তরের পর এদেশে ১৮-১৯টি ক্যু হয়েছে। হত্যা-ক্যু-দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে একটা অরাজকতা আর বিভীষিকার রাজত্ম গড়ে তোলা হয়। শ্বাসরুদ্ধকর আতঙ্কের পরিবেশে মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠে গিয়েছিল।

একুশ বছর এ অবস্থা চলার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নের ধারা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ও দেশের মানুষ কিছু পায়।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৭, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.