দেশে জিকারোগী একজন, গর্ভবতীদের জন্য সাবধানতা
মার্চ ২২, ২০১৬ ঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসে একজন আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করে গর্ভবতীদের সাবধান থাকতে বলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, মশা থেকে দূরে থাকতে হবে প্রত্যেক গর্ভবতী নারীকে। কারণ জিকা ভাইরাসে তার গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ক থেকে যেতে পারে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হতে পারে (মাইক্রোসেফালি)। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। ডেঙ্গু প্রতিরোধে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্মেলনে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, আইইডিসিআর কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, অধ্যাপক শামসুর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির নানাদিকসহ সাবধানতার বিষয়গুলো অবগত করেন।
ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে আক্রান্ত একজনের রক্তের নমুনা এবার পরীক্ষা করে জিকা সনাক্ত হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ৬৭ বছর বয়সী পুরুষ রোগীটি সপরিবারে চট্টগ্রামে আছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।
তিনি আরো জানান, আক্রান্ত রোগীর আশেপাশের ১৫৯ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কারোর রক্তেই জিকার সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। এমনকি রোগীর পরিবারেও কেউ আক্রান্ত হননি।
শামসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও একজন ছাড়া আর কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। এ রোগ মোকাবেলায় টেস্ট কিটস রয়েছে আমাদের। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাও রয়েছে আমাদের। দেশের সর্বত্র সেগুলো পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জিকা প্রাণঘাতি কোনো ভাইরাস নয়। মশা কামড়ালে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। সমস্যা হলো- গর্ভবতী মাকে সে মশা কামড়ালে গর্ভের শিশুর অপরিপক্ক মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই তাদের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মশা ও জিকার আক্রমণের বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি সক্ষম বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একজনও যেন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার।
জিকা ভাইরাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সকল দেশকে সতর্ক রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা প্রস্তুত আছি।
সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনা, প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ চলছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
শামসুর রহমান বলেন, স্বাভাবিকভাবে ধারনা করা হয়, বর্ষায় ডেঙ্গু ছড়ায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাই বাহকের আচরণও পরিবর্তিত হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় কীট বিশেষজ্ঞরা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এ ডেঙ্গুর নানাদিক সনাক্তে গবেষণা করে চলেছেন। শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহসহ সারাদেশেই ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রাক মৌসুম ও বর্ষা মৌসুম পরবর্তী সময়ে মশানিধন কার্যক্রম জোরদার করা, ডেঙ্গুরোগ নির্ণয়ে র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টুল সংগ্রহ ও সকল জেলায় তরণদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সারাদেশের সকল বিভাগীয় শহরে ডেঙ্গু রোগের র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে পরিচালিত হয়েছে বলে জানান তারা। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহর থেকে এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জিকা ভাইরাস আছে কিনা সেটি জানতেও এডিস মশা নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। বাহকে যদি জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছ থেকে মানুষের শরীরে এ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে বলেই এ গবেষণা হয়েছে বলে জানান তারা।
ডেঙ্গুতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বলে জানান অধ্যাপক শামসুর রহমান। মারা যাওয়া রোগীদের চিকিৎসাকালীন তথ্যাদি উপস্থাপন করে তিনি জানান, ইউনাইটেড, স্কয়ার ও ল্যাবএইডে ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন।
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২২, ২০১৬।