জঙ্গিমুক্ত দেশ গঠনে সহযোগিতার আহ্বান

মার্চ ২২, ২০১৬

eyeঢাকা জার্নাল: সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে আলেম সমাজের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, নাশকতাকে শান্তির ধর্ম ইসলাম বরদাশত করে না তা মানুষের কাছে ভালোভাবে প্রচার করার পাশাপাশি এসব বিষয়ে সজাগ থাকার কথাও বলেন তিনি।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় খতিব সম্মেলনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের স্থান নেই। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। ইসলাম কখনো বোমাবাজি বা সন্ত্রাসকে বরদাশত করে না’।

‘যারা জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত তাদের কোনো ধর্মও নাই, সীমারেখাও নাই’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কয়েকটি লোকের জন্য, আমাদের এতো বড় দুর্নাম। এটা সত্যিই কষ্টকর’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, এগুলো যে ইসলাম ধর্মে নাই- সেটা ভালোভাবে প্রচার করবেন। যারা এসব কর্মকাণ্ড করে, আমরা চাই, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, সজাগ থাকবেন’।

‘বিপথে গিয়ে কেউ যেন ইসলামের বদনাম করতে না পারে, সে সুযোগ যেন না দেওয়া হয়’।

কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোরআন পড়ে মানুষ সত্যিকার ধর্মে কি বলে সেটা শিখবেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসের পথ পরিহার করবেন এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। যার যার ধর্ম তিনি পালন করবেন। মানুষকে সেভাবে গড়ে তুলতে আলেম সমাজ কাজ করবেন’।

সব ধর্মের মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে কেউ কোনো কটাক্ষ করুক, এটা আমরা চাই না। আমার নিজের ধর্ম যেমন পালন করি, আমার দেশে অন্য ধর্মের যারা আছেন, তাদেরও আমি সম্মান করি। তাদের ধর্ম তারা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবেন’।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তাদের সে সুযোগ না দেই আজকে বিশ্বের যেসব দেশে মুসলমান কম তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে?’

‘পৃথিবীর সব সৃষ্টিই আল্লাহর। তার সৃষ্টির ওপর আমাদের হাত দেওয়ার দরকার নাই’।

ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদকে জড়ানোর প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতালিতে একটি অনুষ্ঠানে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, ইসলামিস্ট টেরোরিস্ট। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমার যখন বক্তৃতার সুযোগ আসলো, তখন আমি সোজা বললাম, যারা টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী বা জঙ্গি- ওই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস ওটাই তাদের ধর্ম। আমার ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম’।

ফিলিস্তিনে গণহত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেখানে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, অন্ত:স্বত্ত্বা মায়েদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এটা কি সন্ত্রাস নয়, জঙ্গিবাদ নয়? এটাও সন্ত্রাস, তো এটা বলেন না কেন? আরো অনেক দেশ ছিলো, কেউ কিছু বলেনি’।

জীবনে বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ওপর বার বার হামলা করেছে। … আল্লাহ জীবন দেওয়ার মালিক, জীবন নেওয়ার মালিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় বিশ্বাস করি, প্রত্যেকটা মানুষকে আল্লাহ একটা কাজ দিয়ে পাঠান। সেই কাজটা তাকে দিয়ে সম্পন্ন করান। যতোক্ষণ সম্পন্ন না করান, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটা হেফাজত করবেন’।

‘একমাত্র মাথা নোয়াবো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে, আর কারো কাছে নয়’।

বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে আগুন দিয়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার কথা উল্লেখ করে আলেম সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের কাজ করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি’।

‘একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে কিভাবে হত্যা করতে পারে?’- প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রায়ই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আমাদের দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা’।

বিএনপি-জামায়াত ইসলামের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ইসলামের প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান সমকালীন মুসলিম বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা একজন খাঁটি বাঙালি ছিলেন, একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। মনে-প্রাণে তিনি একজন খাঁটি ইমানদার ছিলেন।

ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদর, শবে বরাতে সরকারি ছুটি ঘোষণা, বিশ্ব ইজতেমার জায়গা ও কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণে জমি প্রদান এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

হজযাত্রীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজ কেনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরবর্তীতে জেনারেল জিয়া সেটিকে প্রমোদতরীতে পরিণত করে। জিয়া সরকার মদ ও জুয়ার অবাধ লাইসেন্স প্রদান করেছিলো।

মাদ্রাসা উন্নয়নে ১ হাজারের বেশি মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ, ৮০টি মাদ্রাসায় অর্নাস কোর্স চালু, ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যান ট্রাস্টের মূলধন গঠন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ১ হাজার ৫শ’ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রদান, হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে ১৭০ ফুট মিনার নির্মাণসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে কোরআনুল কারিম বিতরণের উদ্বোধন করেন।

এ কার্যক্রমে সারা দেশের ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭০ কপি কোরআনুল কারিম প্রদান করা হবে।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, জাতীয় খতিব কাউন্সিলের আহ্বায়ক মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আল-কাদেরী।

স্বাগত বক্তব্য দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল জলিল।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.