জঙ্গি আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টা

ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫

10ঢাকা: পরিচয় গোপন রেখে চারমাস আগে বাসা ভাড়া নেন জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) সদস্যরা। ছাত্র ও চাকরিজীবী পরিচয়ের আড়ালে শাহ আলী থানার মিরপুর-১ নম্বর এলাকার ওই বাসাটিকে বোমা তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে তোলেন জঙ্গিরা।

শুধু রাজধানীতে নয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও বিস্ফোরক এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডের সঙ্গে সম্প্রতিক সময়ে ঘটা হোসেনি দালানে বোমা হামলা, আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের হুবুহু মিল রয়েছে।

অবশেষে শাহ আলী থানার ওই জঙ্গি আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টার অভিযান চালান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য। এ সময় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, গ্রেনেড-বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ তিন জেএমবি সদস্য ও সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করে পুলিশ।

আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন নাহিদ ও মামুন বিইউবিএটি নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, নাহিদের ভাগ্নে পিলখানা সদর দফতরের সীমান্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাজ এবং একটি অনলাইনের এইচআর-মার্কেটিংয়ের কর্মী রাসেল।

তবে আটকের আগে ছয়তলা ওই ভবনটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় জঙ্গিরা। এমনকি দু’টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণও ঘটান তারা।

অভিযান শেষে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আস্তানাটিতে লেদ মেশিনসহ গ্রেনেড-বোমা তৈরির সকল উপকরণ পাওয়া গেছে। সেখানে যে পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, তা দিয়ে ২০০টি গ্রেনেড-বোমা তৈরি করা সম্ভব।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হোসেনি দালানসহ সাম্প্রতিককালের বোমা-গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত গ্রেনেড এখান থেকেই সরবরাহ করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেসব বোমা-গ্রেনেডের উপকরণের সঙ্গে এখানকার বিস্ফোরকের হুবহু মিল রয়েছে।

শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টা

আটককৃত এক জেএমবি সদস্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আলী থানার মিরপুর-১ এর ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসার ৬তলায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ২৪) রাত ২টার দিকে ওই বোমা তৈরির আস্তানাটি ঘিরে ফেলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য। অতিরিক্ত ফোর্স এনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় পুরো এলাকার। এরপর শেষ রাতের দিকে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের ৫টি দল সমন্বয় করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে।

প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উল্টো বাসা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি জঙ্গিদের। এরপর নিরাপত্তার স্বার্থে বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাটে বসবাসকারীদের নিচে নামিয়ে আনে পুলিশ। কয়েক দফা চেষ্টার পর সকাল ১০টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এ সময় দু’টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটনায় জেএমবিরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ২ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ২টি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সারোয়ার হোসেন জানান, কোনো হতাহত ছাড়াই অত্যন্ত সফলভাবে এ অভিযান শেষ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ১৮টি গ্রেনেড-বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রাত থেকেই ওই বাড়িসহ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল ১০টার দিকে প্রথমে দু’টি বিকট শব্দের আওয়াজ শুনতে পাই। এরপর আরো অন্তত ২০টি শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বাসার মালিক ব্যবসায়ী আবুল হোসেন ভূঁইয়ার বড় ছেলে সারোয়ার হোসেন ভূঁইয়া  বলেন, চারমাস আগে নজরুল নামের এক ব্যক্তি চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেন। ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় দু’রুমের একটি ইউনিটে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বসবাস করতেন তারা।

বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় নজরুল তার ছোট ভাই ও আরেকজন মিলে মোট চারজন থাকার কথা বলে ভাড়া নেন। পরে তিনজন বাসায় ওঠেন।

বাসার ভাড়ার সময় পরিচয়পত্র চাওয়া হলেও পরে দেবেন বলে তারা আর দেননি বলেও জানান সারোয়ার।

বাসার ভেতরে তারা যে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছেন, তা কখনো বুঝতে পারেননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসার ভাড়া তারা এসে দিয়ে যেতেন বলে ওই দুই ফ্ল্যাটে কখনোই যাওয়া হয়নি। তারা ঘরের ভেতরে এমন আস্তানা গড়ে তুলেছেন, তাও কখনো বুঝতে পারিনি।

ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.