দাবির মুখেও শ্যালা নৌরুট বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন

ডিসেম্বর ৯, ২০১৫

07জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে  সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতির যেমন আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি এই বনের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য পরিবেশ বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডকেও দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা।

গত বছর সুন্দরবনের মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর এই বন রক্ষায় শ্যালা নৌরুট বন্ধ করার দাবি ওঠে।

বিবিসি বাংলার আবুল কালাম আজাদ ওই এলাকা ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন কেন ওই দুর্ঘটনার এক বছর পরেও শ্যালা নদীতে নৌ-যান চলাচল এখনও বন্ধ করা যায় নি।

একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের পশুপাখি জীববৈচিত্র যখন হুমকির মুখে তখন গত বছর সুন্দরবনের মধ্যে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘ এবং পরিবেশবাদীরা।

জোর দাবি উঠেছিল অবিলম্বে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নৌরুট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার।

ঐ দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল এবছর জুনের মধ্যেই শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

চাদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলছিলেন তারা এই রুট স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডাব্লিউটিএ-র কাছে।

মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত চ্যানেলটি চালু করতে এই মুহুর্তে সরকারি সাতটি আর বেসরকারি তিনটি- মোট ১০ টি ড্রেজার একসাথে কাজ করছে।

”নির্দিষ্ট সময়ে তারা মংলা ঘসিয়াখালি চ্যানেলের ড্রেজিংটা শেষ করতে পারে নাই, যার ফলে শ্যালা নদীতে নৌযান চলা পুরোপুরি বন্ধ হয় নাই।”

২০১১ সালে মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার চ্যানেলটিতে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে এটির ড্রেজিং-এর কাজ শুরু হয়, যার খনন কাজ এখনো চলছে।

মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত চ্যানেলটি চালু করতে এই মুহুর্তে সরকারি সাতটি আর বেসরকারি তিনটি- মোট ১০ টি ড্রেজার একসাথে কাজ করছে। এই ২২ কিলোমিটার চ্যানেলটি পুরোপুরি চালু হলেই সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীর মধ্যে দিয়ে নৌ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে বলা হচ্ছে।

ড্রেজিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিআইডাব্লিউটিএ-র প্রকৌশলী জাবের হোসেন মজুমদার বলছেন কাজটা তারা দ্রুত করা চেষ্টা করছেন কিন্তু সেখানে প্রচুর পরিমাণ পলিমাটির কারণে ড্রেজিং-এর কাজটা করতে তাদের নানা বাধা-বিঘ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

”এছাড়াও যে ঘের আছে এবং খাল আছে সেগুলো এখনও আমরা পুরোপুরিভাবে মুক্ত করতে পারি নি- এবং ঘেরগুলো বন্ধ করতে পারি নি- ফলে আমাদের নানা বাধা বিপত্তি হচ্ছে।”

নদী বাঁচানোর আন্দোলনে সম্পৃক্ত মংলা ঘসিয়াখালি চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ সবুর রানা বলছেন শুধু ড্রেজিং করে এই চ্যানেল চালু রাখা অসম্ভব।

”মংলা ঘষিয়াখালি চ্যানেল সন্নিহিত খালটি এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করেছে। কিন্তু সমস্যা হল – আরো যে সংলগ্ন খালগুলো আছে, সেগুলো খনন করা না হলে এই চ্যানেল আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।”

দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল এবছর জুনের মধ্যেই শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বলা হচ্ছে দক্ষিণের এই জনপদের জীবন জীবিকা, মংলা বন্দর এবং সুন্দরবন রক্ষায় এই চ্যানেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভাটি এলাকার বহু বড় বড় নদনদী মরে যাচ্ছে, ড্রেজিং করা খালগুলো পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক কারণে মংলা ঘষিয়াখালি নৌপথ সার্বক্ষণিক সচল রাখার পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত সুন্দরবনের মধ্যেকার শ্যালা নদীটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

সৌজন্যে ঃবিবিসি বাংলা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.