গোপনে দেশ ছাড়লেন শুদ্ধস্বরের টুটুল ও ব্লগার তারেক

নভেম্বর ২৯, ২০১৫

02ঢাকা: ফের হামলা ও প্রাণনাশের শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত গোপনে দেশত্যাগ করলেন দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল ও ব্লগার তারেক রহিম। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া লেখক রণদীপম বসুও জীবনের নিরাপত্তায় বিদেশ চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তারা তিনজনই দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছিলেন এক মাস আগে। এ ঘটনার কোনো কূলকিনারা হয়নি। এছাড়া প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের একই অবস্থা। আলোচিত এই দুই ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব কাউকে আটক করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে টুটুল ও তারেক কয়েক দিন আগে দেশ ত্যাগ করেন।

গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনার মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। একই সময় লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলা চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে গুরুতর আহত করে। ১১ দিন পরে টুটুল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। পরে অন্য দু’জনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। এই দুই ঘটনায় দায়ের করা মামলা এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মুনতাসিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দীপন হত্যা ও টুটুলদের হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও একটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা হত্যা ও হামলার আগে-পরে কোনো প্রযুক্তিগত মাধ্যমের সহায়তা নেয়নি। এ কারণে এই দুই ঘটনা তদন্তে ‘গুপ্তচর’ নিয়োগ করা হয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘাতকরা হত্যা ও হামলার আগে পরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি। এমনকি আজিজ সুপার মার্কেটের ভিডিও ফুটেজ থেকে যাদের সন্দেহ করা হয়েছিল, তাদের ব্যাপারেও কোনো তথ্যই মেলেনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, শাহবাগ ও লালমাটিয়া কেন্দ্রিক সব মোবাইল অপারেটরের টাওয়ার থেকে ঘটনার সময়ের মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়। প্রায় এক লাখ মোবাইল ফোনের নম্বর যাচাই-বাছাই করেও সম্ভাব্য ঘাতকদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা এই হত্যা ও হামলার ব্যাপারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি।

শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের ৭টি সিসি ক্যামেরা থেকে প্রায় চার ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব যাচাই-বাছাই করে। ভিডিও ফুটেজ থেকে শনাক্ত হওয়া সন্দেহভাজন তিন ঘাতকের চেহারার বর্ণনা দিয়ে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাদের পরনে ছিল শার্ট ও প্যান্ট। এদের মধ্যে একজনের পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট। মার্কেটে প্রবেশে করার সময় এদের চোখের ভাষা (আই কন্টাক্ট) ছিল এক রকম। মার্কেট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় চোখের ভাষা ছিল আরেক রকম। প্রবেশের চেয়ে বের হওয়ার সময় তাদের গতি ছিল একটু বেশি। হত্যার ঘটনার আগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় দুই দিকের প্রবেশ গেটের আশপাশে ঘাতকদের সহযোগীদের রেকি করার দৃশ্যও ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। তবে ভিডিও ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজনদের পৃথকভাবে প্রায় তিন হাজার ছবি তৈরি করে শনাক্তের জন্য মাঠে কাজ করা হয়। কিন্তু পুলিশ বা র‌্যাব তাদের শনাক্ত করতে পারেনি।

এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পরও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন আহতরা।এক মাসেও হামলার ঘটনার কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তারা। তাই জীবনের নিরাপত্তায় কয়েকদিন আগে টুটুল ও তারেক রহিম যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। রণদীপম বসুও বিদেশ যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

এ দু’জনের বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তাদের সহকর্মী আরো বলেন, অবস্থান জানতে পারলে, হামলাকারীরা আবারো তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। এই আশঙ্কায় তারা বিদেশ চলে গেছেন।
নভেম্বর ২৯, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.