প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেয়া হবে

মার্চ ২৪, ২০১৩

0,,3903256_4,00ঢাকা জার্নাল: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “এতদিন শুধু তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করেছি। এখন সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করবো। এ আন্দোলন সফল করতে প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশ অচল করে দেয়া হবে। শিগগিরই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

রোববার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়ার মাটিডালিতে এক শোকসমাবেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। গত ৩ মার্চ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহতের  স্মরণে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা করে সহায়তা দেন। এরপর তিনি জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওয়ানা করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা আজ কোনো জনসভা করতে আসিনি।কয়েকদিন আগে পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে এসেছি।”
খালেদা জিয়া সরকারের কর্ম কান্ড নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, “সরকার পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘সরকার দেশে একের পর্ এক গণহত্যা করছে।  সরকারকে অনতিবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায আসলে আওয়ামী লীগকে  গণহত্যার জবাবদিহি করতে হবে এবং বিচার হবে।”আওয়ামী লীগ বেইমান, মোনাফেক, হত্যাকারী ও লুটেরা উল্লেখ করে খালেদা বলেন, “দেশ ও জনগণের জন্য আওয়ামী লীগ কোনো কাজ করে না। তারা দেশে ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই তরুণ প্রজন্মের আওয়ামী লীগকে চিনতে হলে ৭২ থেকে ৭৫ সময়ের তাদের শাসনামলের বই পড়তে হবে।”খালেদা জিয়া বলেন সভায় দাবি করেন  ‘‘আওয়ামী লীগের হাতে কোনো ধর্মের লোক নিরাপদ নয়। কয়েকদিন আগে রামুতে নিরীহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। কিন্তু এ ঘটনায় নিজেদের দলের লোক জড়িত থাকায় কোনো বিচার হয়নি। বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে খুন করা হলো, সারাদেশে হিন্দুদের মন্দির ভাঙা হচ্ছে অথচ সরকার এদের কোনো সহযোগিতা করছে না। আমি ও দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা এসব জায়গায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। আবার দাড়ি টুপি পরার কারণে মানিকগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে বসে মাওলানা নাসিরকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।”তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের খরব থাকবে না দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ব্যর্থতা আর দুর্নীতির কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।আর আমরা বলে দিয়েছি কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।”

তিনি বলেন, “এতদিন আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বললেও এখন বলবো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ কোনো খুনি সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।তাই সরকার পতনে সবাইকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। সেজন্য আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে কর্মসূচি দেয়া হবে।সবাই তা পালন করবেন।”

তিনি উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন, “অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, অনেক রক্ত দিয়েছি।আর একটু কষ্ট করতে হবে।কারণ রক্তপিপাসু সরকারের রক্তের পিপাসা এখনো মেটেনি।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা সন্মান দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর পর শোক দিবস পালন করছি আর আওয়ামী লীগের লোকজন শোকের কথা বলে বিএনপি নেতাকর্মীদের খুন করছে। এরা একটা অপাদর্থ সরকার। তারা দেশও পরিচালনা করতে পারে না। শোক দিবসের মধ্যে মানুষ অফিস করেছে, তারা ছুটি ঘোষণা করতে দেরি করেছে।”

একদফার আন্দোলনে বগুড়াবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন খালেদা জিয়া।

৩ মার্চের হরতালে সহিংসতার পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে দাবি করে এজন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করে। দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা বসে থাকবে না। তারা সময়মত দায়িত্ব পালন করবে। আমাদের  সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিদেশে শান্তি স্থাপনে কাজ করতে যায়। তাদের দেশের যদি শান্তি না থাকে তাহলে বিদেশিরা বলবে, আমাদের সেনাবাহিনী নিজের দেশে শান্তি রক্ষা করতে পারছে না। এসব আজ ভাবনার সময় এসেছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, “জনগণের ওপর চড়াও হবেন না। আসুন, জনতার কাতারে এসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এই সংগ্রামে জনগণের বিজয় হবে। জনগণের সংগ্রাম কোনো গুলি-বোমা দিয়ে ঠেকানো যাবে না।”পুলিশের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, “জনগণের ওপর গুলি চালাবেন না। এর জন্য আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।”সরকারকে সবক্ষেত্রে ব্যর্থ উল্লেখ করে আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করবে বলে জানান খালেদা জিয়া।তিনি বলেন, “আগামীতে তার দল ক্ষমতায় গেলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা হবে।”রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ডাণ্ডাবেড়ী পড়ানোর কঠোর সমালোচনা করে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, “এমন ঘটনা নজিরবিহীন। তাই বলবো আগামীতে আপনাদের এই ডাণ্ডাবেড়ী পরানো হবে, পরতেই হবে।”

এর আগে রোববার বেলা পৌনে ১১টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোকসমাবেশ।জেলা বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভা্পতি ভিপি সাইফুল ইসলাম।

এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, জামায়াতের অধ্যাপক শামসুল আলম এমপি, জেলা আমির অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শামসুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবদিন চাঁন, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির জাগপা জেলা সভাপতি আমীর হোসেন মন্ডল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা জানাতে খালেদা জিয়া শনিবার বিকেলে বগুড়ার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। রাতে তিনি বগুড়া সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। সমাবেশ শেষ করে তার জয়পুরহাটে যাওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.