একটি আবেদন…
আগস্ট ২৮, ২০১৫ আপনার বাড়ির অনুষ্ঠানে খাবার অতিরিক্ত হলে অনুগ্রহ করে ফেলে দেবেন না। ১০৯৮ নম্বরে ফোন করুন। চাইল্ড হেল্প লাইন থেকে এসে খাবারগুলি নিয়ে যাবে। আপনার অতিথিদের খাইয়েও বেঁচে যাওয়া খাবারটুকু অভুক্ত বা অর্ধভুক্ত শিশুগুলির মুখে কি তুলে দেবেন না?’ এই বাক্যগুলোর নিচেই লেখা, অন্যদের জানাতে পোস্টটি শেয়ার করুন।
কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে এ ধরনের একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে। আর অভুক্ত শিশুদের জন্য সবাই যে যার মতো পোস্টটি শেয়ার দিচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছে বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশ। কেননা চাইল্ড হেল্প লাইনের ১০৯৮ নম্বরটি তাদের। তবে এই নম্বরের বরাত দিয়ে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, তা ওই সংগঠনের বক্তব্য নয়। হেল্প লাইনে এ ধরনের কোনো সেবাও তারা দেয় না।
সংগঠনটি বলছে, শিশু নির্যাতন বা অন্য কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে শিশু, তার অভিভাবক বা অন্য যে কেউ টোলফ্রি নম্বরটিতে ফোন করে সহায়তা চাইলে কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। অথচ ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে, এ নম্বরে ফোন দিলে সেখান থেকে লোক বাড়ি বাড়ি গিয়ে অতিরিক্ত বা বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো নিয়ে আসবেন।
এ ব্যাপারে জানতে অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের পোস্ট আমরা দিইনি। দেওয়ার প্রশ্নও আসে না। কেননা কারও বেঁচে যাওয়া বা ফেলে দেওয়া বাসি, পান্তা খাবার আমরা শিশুদের খাওয়ার জন্য কখনোই কুড়িয়ে আনতে যাব না। আর আমাদের একেকটি ড্রপ ইন সেন্টার বা অন্যান্য সেন্টারে অনেক শিশু একসঙ্গে থাকে। কেউ যদি একজনের জন্য খাবার দিতে চায় সেই খাবার আমরা কেন আনতে যাব?’
ওয়াহিদা বানু আরও বলেন, ‘কেউ একজন নিজ দায়িত্বে এ ধরনের পোস্ট দিয়েছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন, হেল্প লাইন এ ধরনের কাজই করে। আর অন্যরাও কাজটিকে খুব ভালো মনে করে সমানে শেয়ার দিচ্ছেন। আমাদের জনবল এখন এ-সংক্রান্ত ফোন রিসিভ করতে করতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। তবে যাঁরাই ফোন দিচ্ছেন, তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেউ যদি আমাদের সেন্টারে থাকা পথশিশু, বস্তিবাসী শিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবার বা টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করতে চান, আমরা তাঁকে সব সময় স্বাগত জানাই। তবে তাঁকে এলাকার সেন্টারে থাকা সব শিশুর জন্য করতে হবে। কোনো সেন্টারে ৩০ জন শিশু আছে, আবার কোনো এলাকার সেন্টারে ১৫০ জনও থাকতে পারে। এই শিশুদের জন্য কেউ বস্তা ভরে চাল দিচ্ছেন। আবার কেউ ডাল দিচ্ছেন। আবার অনেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এসে শিশুদের সঙ্গে বসে খান। অনেকে টাকা দিয়ে সহায়তা করছেন। এক-দুজন শিশু খাবে, অন্যরা দেখবে, তা তো হবে না। আর কেউ যদি বেঁচে যাওয়া বা অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসার জন্য ফোন দেন, আর আমার লোক মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ী গিয়ে সেই খাবার আনতে যাবেন, তা সম্ভব না। তবে কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই সব শিশুর জন্য কিছু করতে চান, তাহলে হয়তো লোক পাঠানো যেতে পারে।’
অপরাজেয় বাংলাদেশ দাতা সংস্থা, কমিউনিটির লোকজনের সহায়তা এবং ব্যক্তি সহায়তায় শেল্টার হোম, ডে কেয়ার, শুধু দিনে বা রাতে বিভিন্ন সেবা নেওয়ার কেন্দ্রসহ প্রায় ১০০টি কেন্দ্র পরিচালনা করছে। সারা দেশে মোট ২০০টি কেন্দ্র আছে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা কেন্দ্র আছে। পড়াশোনা, কারিগরি শিক্ষা, বিভিন্ন কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাল্যবিবাহ, মাদকের কুফলসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এখানে জানানো হচ্ছে। অনেকের বাবা-মাকে খুঁজে পেলে তাদের বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পড়াশোনা বা কারিগরি শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের পরও সেবা দেওয়া হচ্ছে।