নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে খুলনা
জুন ১৪, ২০১৩ ঢাকা জার্নাল: খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন শনিবার। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ৠাব, পুলিশ, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে সমগ্র মহানগরীতে। তারা খুলনাকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন।
এদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বৃহস্পতিবার আবারো সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করা হয়। দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য প্রায় সাত হাজার নিরাপত্তা কর্মী শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। নগরীর প্রবেশ পথগুলোতে পুলিশের বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই মহানগরী জুড়ে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নগরীর প্রতিটি সড়কে পুলিশ অস্থান নিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় ৠাব তৎপর রয়েছে। ৠাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছেন নগরী জুড়ে।
খুলনা মহানগরীর ২৮৮টি কেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করতে হার্ডলাইনে থাকবেন এসব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৮টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটারদের সুবিধার্থে এক হাজার ৪২৮টি স্থায়ী বুথ ছাড়াও ৩৩টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ করা হয়েছে। এবার ২০২টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, আনসার ব্যাটালিয়ান ও আনসার ভিডিপির মোট ২৪ সদস্য দায়িত্বরত থাকবেন। সাধারণ ওয়ার্ডে থাকবেন ২২ জন সদস্য। এসব সদস্যরা শুক্রবার দুপুরের আগেই স্ব-স্ব কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে ৩১টি মোবাইল ফোর্স, ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৠাবের স্টাইকিং ফোর্স ৮টি এবং রিজার্ভ ফোর্স থাকবে ৪টি।
এছাড়া সাদা পোশাকসহ ৩৭৯ জন ৠাব সদস্য মাঠে থাকছেন। সেনাবাহিনী না থাকলেও ৭ প্লাটুন বিজিবি ও ৩ প্লাটুন কোস্টগার্ড থাকছে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে। বিজিবি ও কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। এছাড়া ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বরত আছেন।
খুলনার রিটার্নিং অফিসার মোস্তফা ফারুক বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিয়ে তাদের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারেন সে লক্ষ্যে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনোর কোনো সহিংসতা ও বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি। মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেল আটক করেছে পুলিশ। মোটরসাইকেলগুলো থানায় রাখা হয়েছে। নির্বাচনের পর সেগুলো ছাড়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট থানা জানিয়েছে।
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ও সেনা মোতায়েনের দাবি সস্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের চায়ের দোকানদার বাংলানিউজকে বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। পটুয়াখালী থেকে আসা আব্দুল মান্নান ১৬/১৭ বছর ধরে খুলনায় থাকেন। সিটি করপোরেশনের ভোটার। তার কাছে সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেনাবাহিনী দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন।
আরেকজন ভোটার টেম্পুচালক নাসিরও মনে করেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হবে। নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে নাসিরের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তেমন কোনো সমস্যা নেই।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান বাবু বলেন, সেনা মোতায়েনের দাবি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এ ব্যাপারে দুই প্রার্থী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা রাজনৈতিক বক্তব্য। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
উল্লেখ্য, ১৬ লাখ জনগণ অধ্যুষিত খুলনা সিটি করপোরেশনে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন ভোটার ভোট দেবেন। এর মধ্যে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৪, ২০১৩।