Lead

21863ঢাকা জার্নাল: দেশের চার সিটি করপোরেশন রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে নির্বাচন অনষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। এ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে লক্ষ্যে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে ইসি।

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ভোট গ্রহণের জন্য যাবতীয় নির্বাচনী মালামাল নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ভোটাররা যাতে মোবাইল ফোনে এসএমএস’র মাধ্যমে তাদের ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম জানতে পারে সে ব্যবস্থাও কমিশনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

ভোট কেন্দ্রে এবং নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব এবং আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রসমূহকে ঝুঁকি বিবেচনা করে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ভোট গ্রহণের আগের দু’দিন, ভোট গ্রহণের দিন এবং ভোট গ্রহণের পরের দিনসহ মোট ৪ দিন ভোট কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃংখলা রক্ষার্থে মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ব্যাটেলিয়ন আনসার ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

চারটি সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোবাইল ফোর্স ও তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্সের দল নিয়োজিত থাকবে।

চার সিটি করপোরেশনে ১১৮টি মোবাইল এবং ৪০টি স্ট্রাইকিং ফোর্সের দল নিয়োজিত রয়েছে। একই সাথে চার সিটিতে ১৬ প্লাটুন বিজিবি এবং খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ প্লাটুন কোস্টগার্ডের সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। তাদের সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডুবুরিও দায়িত্ব পালন করছে।

চার সিটি করপোরেশন এলাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে ৯১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচনী অপরাধ সংঘটনের দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য প্রতি সিটি করপোরেশনে ৫ জন করে মোট ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং নির্বাচনী এলাকা থেকে দু’দিন আগেই বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন করা হয়েছে। একই সাথে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাপকসংখ্যক দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষকরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

আগামীকালের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাসসকে জানান, আগামীকাল দেশের চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সকল নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আজ সন্ধ্যার মধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় সরঞ্জামাদি প্রতি কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছে।’

ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা সময় মতো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।’

তিনি আগামীকালের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ২৯ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ইসি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তালা, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আনারস এবং মো. হাবিবুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই সাথে এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৫৫ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা হলো ৩০ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০। মোট ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২২ জন।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক তালা, মো. মনিরুজ্জামান মনি আনারস এবং মো. শফিকুল ইসলাম মধু দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। এ সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৩৭ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ সিটি করপোরেশনের ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন মহিলা ভোটার।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাহমুদুল হক খান মামুন দোয়াত-কলম, মো. আহসান হাবিব কামাল আনারস এবং মো. শওকত হোসেন হিরন টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ এবং সংরক্ষিত আসনে ৪৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ সিটি করপোরেশনের ৩০টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মোট ভোটার ২ লাক ১১ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩২ জন মহিলা ভোটার।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী টেলিভিশন, বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান আনারস এবং মো. ছালাহউদ্দিন রিমন তালা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। এ সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৯ জন এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেট্ সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৫ জন।

ইসি সচিবালয় সূত্র আরো জানায়, দেশের চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ হাজার ৮০ জন কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ কাজে দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৬৫৩ জন, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ৩ হাজার ৮০৯ জন এবং পোলিং অফিসার হিসেবে ৭ হাজার ৬১৮ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনকে দক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। – বাসস

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.