কলকাতায় জমজমাট ‘বাংলাদেশ বইমেলা’

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩

আকাশে জমেছে পেঁজাতুলোর মতো শরতের মেঘ। মাঠের আনাচে কানাচে চোখে পড়ছে কাশফুল। গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অপেক্ষায় আছে শারদ উৎসবের। আর সেই উৎসবকে আরও সৃজনশীল করে তুলতে বৃহস্পতিবার কলকাতার রবীন্দ্র সদন-নন্দন চত্বরের গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালায় উদ্বোধন হলো ‘বাংলাদেশ বইমেলা ২০১৩’।

বাংলাদেশ উপ হাই কমিশন, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এ মেলার আয়োজন করেছেন।

চলতি বছরে এ বইমেলা তিন বছরে পা দিল। বিগত দুটি বছরের মতোই এই বছরেও মেলা শুরুর আগে থেকেই বাঙালি পাঠক মহলে মেলা নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ তৈরি হয়। লেখক এবং পাঠকের এই মিলন মেলায় পাঠকদের ভিড় দেখে মনে হয় যেন নূহাশ পল্লী আর দিকশূন্যপুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে বইয়ের পাতায় পাতায় আর অক্ষরের আঙ্গিকে।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, অ্যাকাডেমি অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি ওসমান গনি এবং মেলার আহবায়ক ফরিদ আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ উপস্থি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি সচিব ড. রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস বাংলা একাডেমী-এর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম। রবীন্দ্র ভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরি, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড-এর তরফে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় সহ দুই বাংলার কবি সাহিত্যিক ও গুণীজনেরা।

ব্রাত্য বসু বলেন, রাজনৈতিকভাবে দুই বাংলা আলাদা হলেও মানসিকভাবে এক। তিনি প্রশ্ন তোলেন এই মেলা মাত্র তিন বছর কেন?

আরও আগে থেকেই এই মেলা হওয়া উচিৎ ছিল বলে তিনি মনে করেন। মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে তিনি জানান। তিনি আশ্বাস দেন আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে এই মেলা করা হবে।

বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, ৫ হাজার শিরনামের বই এবারের মেলায় এসেছে। তার মধ্যে ২ হাজার জন নতুন লেখকের বই। মোট ১ লাখ ৮০ হাজার বই বইমেলায় এসেছে বলে তিনি জানান।

রবীন্দ্র ভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরি বলেন, বাংলাদেশ সংস্কৃতির জগতে খুবই উন্নত। পশ্চিমবাংলা সহ গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের এই সাংস্কৃতিক উন্নতির সমাদর করছে।

ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মন থেকে দুই বাংলাকে ভাগ করা যায় না। তিনি সব সময়ই বাংলাদেশ ও বাঙলা ভাষার জন্য গর্ব অনুভব করেন বলে জানান।

মেলা শুরুর সাথে সাথেই মেলায় আশা ২৮টি স্টলে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ছোট বড় নানা বয়েসের মানুষ ভিড় জমান এই স্টলগুলিতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন লেখকের বই নিয়ে তাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সদ্য প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।

যে প্রকাশনী সংস্থাগুলি হাজির হয়েছে তাদের মধ্যে বাঙলা অ্যাকাডেমী, অনন্যা, অন্য প্রকাশ, ভাষাচিত্র, সন্দেশ, সদর প্রকাশনী, আহমেদ পাবলিশিং হাউজ, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ অন্যতম। প্রতিটি স্টলের সামনেই উৎসাহী ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

শারদ উৎসবে পোশাক পরিচ্ছদের সাথে সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বই কেনার রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
Vaskor-bg20130926093145
ঢাকা জার্নাল: পুকুরে পদ্ম, শালুক আর বাড়ির ছাদে নীলকণ্ঠ পাখিদের আনাগোনা শুরু হলেই পটুয়া পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তোড়জোড় শুরু হয় কলকাতার বই পাড়ায়। সেই কারণেই বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’ বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

বিগত দুটি বইমেলা বাংলাদেশের বইয়ের অনেক নতুন পাঠক তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন হাজির হওয়া প্রকাশকরা।

বাংলাদেশের বই এক সঙ্গে হাতের কাছে পাবার অন্যতম জায়গা এই বইমেলা। এই মেলায় বিশেষ ২৫ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকের কাছেই এটা বাড়তি আকর্ষণ, বাড়তি পাওনা।

মেলায় হাজির থাকছেন বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকরা। তদের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পশ্চিমবাংলার পাঠকদের কাছে আরও একটি বড়ো প্রাপ্তি।

বইমেলা উপলক্ষে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বাঙলা একাডেমী হলে ‘মৈত্রীর জন্য বই’ এবং ‘বাঙলা কথা সাহিত্য এবং বাঙলা পাঠক’ শীর্ষক দুটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভায় উপস্থিত থাকবেন কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, কবি বেলাল মহম্মদ, তিলোত্তমা মজুমদার, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বীথি চট্টোপাধ্যায়, কবি কামাল চৌধুরী, অসীম সাহাসহ দুই বাংলার আরও অনেক বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক, শিল্পী ও গবেষকরা।

মেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রকাশকদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশক ও বই আমদানি কারকদের একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকাশক সমিতির তরফে সাক্ষাৎ করা হবে।

মেলায় আগত মানুষের বই কেনার সঙ্গে সঙ্গে আবেগ, উৎসাহ ভালোবাসা দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশ বইমেলা মাত্র তিন বছরেই পশ্চিমবঙ্গবাসীর বাৎসরিক দেওয়াল পঞ্জিকায় একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। মেলা চলবে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.