জাতিসংঘে অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর শেখ হাসিনার

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩

PM-Hasina_18320ঢাকা জার্নাল: জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে: মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে একটি চুক্তি ও একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল পৌণে দশটায় জাতিসংঘ সদর দফতরের ১০৩৪ নম্বর কক্ষে অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি (এটিটি) এবং বিশেষ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র (সিসিডব্লিউ) বিষয়ক ওয়ার অব কনভেনশনের প্রটোকল-৫ স্বাক্ষর করেন তিনি।

প্রথমে বিশ্বের ৮৩তম রাষ্ট্র হিসেবে অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী অবৈধ ও অবাধ অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধের লক্ষ্যে এ চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ। পরে স্বাক্ষর করেন প্রটোকলে।
চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষরের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরমানু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের প্লেনারি বৈঠকে অংশ নিয়ে পরমানু অস্ত্র শক্তি কমিয়ে জনগণের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অর্জনে বিশ্ব নেতৃত্বকে আহ্বান জানান।

দক্ষিণ এশিয়াকে পরমানু অস্ত্রমুক্ত একটি জোন করতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে প্লেনারিতে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে পরমানু অস্ত্রমুক্ত জোন হিসেবে পেতে দীর্ঘ সময় ধরেই কথা বলে আসছে বাংলাদেশ| প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আমরা বারবার ‘শান্তির সংস্কৃতি’ স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করছি।
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যকে পরমানুঅস্ত্রমুক্ত জোন করতে এইসব দেশের প্রতি এই অস্ত্রবিরোধী সকল চুক্তি ও প্রোটোকলে অনুস্বাক্ষরের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে অনুষ্ঠিত এ প্লেনারি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করে, কোনো পরমানু অস্ত্রই প্রকৃত নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারে না। তিনি বলেন, বরং জনগণকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও শান্তির দৃষ্টিকোণ থেকে মানবতাকে উপলদ্ধি করা সম্ভব হলেই বিশ্বে শান্তি আসবে।
হিরোশিমা নাগাসাকির সেই ভয়াবহতা গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পর জাতিসংঘ বিশ্বকে পরমানু শক্তিমুক্ত করার লক্ষ্যে যে কনভেনশন নিয়েছিলো সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরে কেটে গেছে ৬৭টি বছর। কিন্তু পরমানু অস্ত্র তৈরি আজও অব্যাহত রয়েছে। কে কার চেয়ে অধিকতর ভয়ঙ্কর অস্ত্র বানাতে পারে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে পারলেই বিশ্ব মানবতা মুক্তি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে বলেন, আরও অনেকের মতো তিনিও এই অস্ত্রের বিপজ্জনক দিকটি অনুধাবন করেছিলেন। আর সে কারণেই ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের এই বিশ্ব দরবারে হাজির হয়ে পরমানু অস্ত্রের ভয়াবহতা থেকে বিশ্বকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আজ আরও একবার আমরা বিশ্বকে একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকিমুক্ত রাখার কথা বলছি। আমরা বিশ্বকে একটি শান্তি নিরাপত্তা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছি। আর তা সম্ভব হবে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি ও নব নব আবিস্কারের মধ্য দিয়েই।

উল্লেখ্য, বিশেষ কিছু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ১৯৮১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয় কনভেনশন অব সার্টেইন কনভেনশনাল উইপনস (সিসিডব্লিউ)। এর আগের বছরের ১০ অক্টোবর সিসিডব্লিউ-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়। এ কনভেনশনের লক্ষ্য হচ্ছে, সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের হামলা থেকে রক্ষা করা। বিশেষ অস্ত্র বলতে পারমাণবিক অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র, জীবাণু অস্ত্রসহ সমুদ্র ও ভূমি মাইন, দৃষ্টি আচ্ছন্ন লেজার অস্ত্র, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে।
১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এ কনভেনশন কার্যকর হয়ে আসছে। মেক্সিকো প্রথম এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। ২০১৩ পর্যন্ত বিশ্বের ১১৭টি দেশ কনভেনশন অনুমোদন দিয়েছে।
৫ প্রটোকল বিশিষ্ট এ কনভেনশনের শেষ প্রটোকলটি ২০০৩ সালের নভেম্বরে অনুমোদিত হয়। এটি যুদ্ধের পর অবিস্ফোরিত পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রাদি অপসারণ সংক্রান্ত। একে বলা হয় এক্সপ্লোসিভ রেমন্যান্টস অব ওয়্যার (ইআরডব্লিউ)। এ প্রটোকল ২০০৬ সালের ১২ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
এ প্রটোকল মতে, যেসব বোমা, গ্রেনেড কিংবা গোলা বিস্ফোরিত হয়নি কিংবা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গেছে এবং যেসব অস্ত্র আকস্মিকভাবে যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে- এমন অস্ত্র যে রাষ্ট্র ব্যবহার করবে তাদেরকে অপসারণ করতে হবে।
প্রটোকল অনুযায়ী সে দেশের সরকার অন্যদের কাছে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা চাইতে পারে।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.