সুখরঞ্জন বালিকে ফিরিয়ে আনার দাবি

মে ১৮, ২০১৩

Saidi (3)ঢাকা জার্নাল: ভারতে বন্দি সুখরঞ্জন বালিকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক৷

তিনি দাবি করেন, পুলিশ সুখরঞ্জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে ধরে নিয়ে যায়৷

সাঈদীর আইনজীবী প্যানেলের প্রধান ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন বালিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর হাতে তুলে দেয়৷ বিএসএফ তাকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দমদমের একটি কারাগারে তোলে৷ পরে ভারতীয় আদালত তাকে ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়৷’’

সুখরঞ্জন নিজেও এসব কথা স্বীকার করেছেন – এ কথা উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে এ সকল তথ্য এসেছে৷ এখন আমাদের দাবি, তাকে নিরাপদে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনা হোক৷’’

তবে সাঈদীর আইনজীবী প্যানেলের এই দাবি অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন ছিলেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী৷ অথচ রাষ্ট্রপক্ষে যখন সাক্ষ্য চলছিল তখনই তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ এ কারণে তার পরিবার তখন থানায় সাধারণ ডায়েরিও করে৷ এরপর তাকে বাদ দিয়েই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য শেষ করা হয়৷ আসামিপক্ষেও ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন৷ তখনও তারা (আসামিপক্ষ) বলেননি যে সুখরঞ্জন তাদের পক্ষে সাক্ষী দেবেন৷ উভয় পক্ষের সাক্ষী যখন শেষ, তখন একদিন হুট করেই সাঈদীর আইনজীবীরা বললেন যে, সুখরঞ্জন তাদের পক্ষে সাক্ষী দিতে ট্রাইব্যুনালে আসার সময় গেট থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে৷ আসলে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা এই দাবি তুলেছেন৷‘‘

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘সুখরঞ্জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ধরে নিতে যাবে? সুখরঞ্জন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিলেই যে সবকিছু তার পক্ষে চলে যাবে, এমন তো নয়৷’’

তিনি দাবি করেন, আসলে সাঈদীর পক্ষের লোকজনই সুখরঞ্জনকে সরিয়ে ফেলেছে এবং রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী দিতে দেয়নি৷

সরকারি প্রসিকিউটরের এমন বক্তব্যকে মানতে রাজি নন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক৷

তিনি বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন ছিলেন সাঈদীর পক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী৷ যে কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে৷ সরকারি আইনজীবীরা এ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন৷ তাই সুখরঞ্জনকে দেশে ফিরিয়ে আনলেই সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের রিপোর্টে এসব ব্যাপার অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷

গত বছরের ৫ নভেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহৃত হন সুখরঞ্জন – শুরু থেকেই এমন দাবি করে আসছেন সাঈদীর আইনজীবীরা৷

এদিকে, সুখরঞ্জনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)৷ এইচআরডাব্লিউ-এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস এক বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালে এভাবে সাক্ষী অপহরণের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ, বিচারক ও সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে৷

আসামিপক্ষের এমন অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষ পরে আদালতকে জানায় যে, আসামিপক্ষের এই অভিযোগ সত্যি নয়৷ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেইনি এবং এ বিষয়ে আদালত আর কোনো আদেশও দেয়নি৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.