পোশাক শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে উদ্যেগ

মে ১৩, ২০১৩

may_day_by_enzocavalli-d3fa3h5ঢাকা জার্নাল: দেশে সাভারে ভবন ধসে হাজারেরও বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য মালিকদের কাছে তালিকা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হচ্ছে। একইসাথে, একশ’রও বেশি শ্রমিক কাজ করেন যেসব কল কারখানায় সেখানে গ্রুপ বীমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

এসব প্রস্তাব সম্বলিত শ্রম আইনের একটি সংশোধিত খসড়া আজ সোমবার মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে।

বর্তমান শ্রম আইনেই সব ধরনের শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের কথা বলা রয়েছে।

কিন্তু সরকার বলছে, আইনগত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রধান ইস্রাফিল আলম জানিয়েছেন, শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে এর নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় মালিক পক্ষের সম্পৃক্ততার বিষয়কেই বড় বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং সে ব্যাপারেই মূল সংশোধনীর প্রস্তাব আনা হয়েছে।

ইস্রাফিল আলম বলেন, ‘এখনকার আইনে ট্রেড ইউনিয়নের জন্য শ্রম দপ্তরে আবেদন করলে পরিচয় যাচাই বাছাই করতে আবেদনকারীদের তালিকা মালিকের কাছে পাঠানো হতো। সেই তালিকা পাওয়ার সাথে সাথেই মালিক সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করে মামলা দেয়। তখন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আদায়ের প্রশ্ন বাদ দিয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে কারণেই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই বাছাই করবে শ্রম অধিদপ্তর। এখানে মালিককে সম্পৃক্ত করা যাবে না।’

ইস্রাফিল আলম আরও বলেছেন, এখনকার আইনে তৈরি পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন করা সম্ভব নয়।

সংশোধনী প্রস্তাব পাশ হলে সেটা সহজ বা বাধামুক্ত হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।

সাভারে ভবন ধ্বসে এক হাজারেরও বেশি গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার পটভূমিতেই শ্রমিকের নিরাপত্তা প্রশ্নে শ্রম আইনের বিভিন্ন সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হলো।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতা ওয়াজেদুল ইসলাম খান মনে করেন, বেসরকারি খাতে বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে না।

এর ফলে এই খাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানে বেগ পেতে হয়।

ওয়াজেদুল ইসলাম এখন ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় মালিকের সম্পৃক্ততা না রাখার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।

একইসাথে তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন রাখবে, সেটাও আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা উচিত।

ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের বিষয় ছাড়াও শ্রমিকের গ্রুপ বীমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব আনা হয়েছে।

কোন প্রতিষ্ঠানে একশ শ্রমিক কাজ করলেই তাদের জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেছেন, মালিক-শ্রমিক সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। মালিকরা আইন মানতে বাধ্য বলেই তিনি উল্লেখ করেন।

তবে তৈরি পোশাক শিল্পে মালিকদের অনেকেই বলেছেন, তারা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের বিপক্ষে নন।

মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার মালিকরা দিতে চায় না, এই কথার সাথে আমি একমত নই। এই জায়গায় আমাদের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টা বাস্তবায়ন করতে হলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন এবং তাদের মানসিকতায় বা সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।’

এখন শ্রম আইনের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো বিল আকারে সংসদে যাবে।

 

ফিচার ছবি: প্রথম আলো

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.