দেশে ৭০০ গার্মেন্টস কারখানা ত্রুটিপূর্ণ

মে ১৩, ২০১৩

0,,3999583_4,00ঢাকা জার্নাল: পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণে সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে৷ তিন মাসের মধ্যে এই বোর্ড নতুন মজুরি নির্ধারণ করবে৷ তবে তা কার্যকর হবে চলতি বছরের ১লা মে থেকে৷

পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইস্রাফিল আলম এমপি৷

তিনি বলেন, “বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এক বেঠকে সিধান্ত হয়েছে যে, বোর্ডের প্রধান হবেন একজন জেলা জজ৷ বোর্ডে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন৷ আর একজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন স্বাধীন সদস্য হিসেবে৷ পাঁচ সদস্যের এই বোর্ড আগামী তিন মাসের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি ঠিক করবে৷ তবে নতুন মজুরি যখনই নির্ধারণ করা হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন হবে ১লা মে থেকে৷”

জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যে নেতিবাচক ‘ইমেজ’ তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতেই পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর এই পদক্ষেপ৷ এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়৷ তাতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০০০ টাকা৷ সেই সময় মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ইকতেদার আহমেদ৷ তিনি বলেন, “জীবনযাত্রার ব্যয় ও মান, মূদ্রাস্ফিতি, খাদ্য, চিকিত্‍সা এবং আবাসন খরচসহ নানা দিক বিবেচনায় রেখে মজুরি নির্ধারণ করা হয়৷ ২০১০ সালে মালিক, শ্রমিক, সরকার – সব পক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল৷”

তাই তিনি আশা করেন, এবার নতুন মজুরি নির্ধারণে অবশ্যই যেন ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী প্রতিবছরের মূদ্রাস্ফিতির হিসাব বিচেনায় নেয়া হয়৷

এদিকে বণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের জানিয়েছেন, সারাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে ৭০০ কারখানাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এসব ত্রুটি নানা ধরণের – কোনোটির ভবন ঝঁকিপূর্ণ, কোনোটাতে আবার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পর্যপ্ত নয়৷ এর মধ্যে ঢাকায় ১৬টি, চট্টগ্রামে ৪টি এবং নারয়ণগঞ্জে ২টি কারখানানাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এই ২২টি কারাখানা বন্ধ করে দেয়া হবে৷ বাকি কারখানাগুলোকে ত্রুটিমুক্ত করতে সময় বেধে দেয়া হয়েছে৷ তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত করা না হলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

বাংলাদেশে চার হাজারের মতো পোশাক কারখানা আছে৷ এসব কারখানায় প্রায় ৩৬ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ করেন, যাদের অধিকাংশই নারী৷ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান৷ তবে পোশাক শ্রমিকদের মাসে গড়ে আয় ৩৮ মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি নয়৷ বলা বাহুল্য, এই মজুরি বিশ্বের সর্বনিম্ন৷ আর শ্রমিকদের নিরপত্তা এবং কাজের পরিবেশও প্রশ্নের মুখে৷

মজুরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ মনে করেন, শুধু মজুরি বাড়ানোই যথেষ্ঠ নয়, শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরিও বাড়াতে হবে৷ তাদের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করলেই তবে প্রকৃত মজুরি বাড়বে৷ তিনি বলেন, পোশাক শিল্প সাধারণ বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প নয়৷ কিন্তু অবহেলা আর মুনাফালোভীদের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে৷ বাংলাদেশের পোশাক কারখানা ‘মৃত্যুকূপ’ – এই দুর্নাম ঘুচাতে হবে৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.