১৩ বছরের শুল্ক ফাঁকির হিসাব কষছে এনবিআর

মে ১০, ২০১৩
image_285_37386
ঢাকা জার্নালঃ বিদেশী পর্যটকদের ব্যবহারের কথা বলে কারনেট সুবিধায় বিলাসবহুল গাড়ি দেশে আনার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ পরিপ্রেক্ষিতে শুল্কস্টেশনে ফাঁকি দেয়া অর্থ উদ্ধারে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১৩ বছরে কারনেট সুবিধায় আনা সব গাড়ির যাবতীয় তথ্য এনবিআরে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, উল্লিখিত সময়ে পর্যটন বা কারনেট সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে পাঁচ শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি দেশে এসেছে। সাধারণত এসব গাড়ি আমদানিতে ১২৭ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পর্যটন সুবিধায় বছরের পর বছর ধরে বিনা শুল্কে গাড়ি আনা হয়েছে। এগুলো পুনরায় ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে বলে শুল্ক বিভাগ মনে করছে।
এ প্রসঙ্গে শুল্ক বিভাগের সদস্য মো. নাসির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা শনাক্ত করতে সব শুল্কস্টেশনের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। মূলত কারনেট সুবিধায় আনা গাড়ির শুল্ক ফাঁকি ধরতে গত কয়েক বছরের হিসাব করা হচ্ছে। আশা করছি, রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটলে তা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
এনবিআরের নির্দেশনার পর সিলেটের তামাবিল শুল্কস্টেশন দিয়ে পর্যটন সুবিধায় আনা গাড়ির তালিকা পাঠিয়েছে সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। সেখানে জানানো হয়েছে, তামাবিল স্থল শুল্কস্টেশনের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১-এর ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬টি গাড়ি ও তিনটি মোটরসাইকেল ভারতের মেঘালয় ডাউকি স্থলবন্দর হয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশে আনা হয়েছে। আমদানিকৃত এসব গাড়ি ও মোটরসাইকেলের কোনোটিই এ দফতরের মাধ্যমে পুনরায় ফিরে যায়নি। এমনকি খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বর্তমানে এমন কোনো গাড়ি নেই।
সূত্র জানায়, শুল্ক ফাঁকি রোধে কারনেটের আওতায় আনা গাড়ির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে প্রচলিত হারে শুল্ক বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টি হিসেবে জমা রাখার বিধান করেছে এনবিআর। গত বছরের এপ্রিলে জারি করা এ নতুন বিধি অনুযায়ী কারনেটের আওতায় আনা গাড়ি ঘোষিত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে নেয়া হলে জমা রাখা ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ ফেরত পাবেন সংশ্লিষ্ট পর্যটক। কিন্তু যদি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি হাতবদল হয়, তবে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে জমা থাকা অর্থের মালিক হবে বাংলাদেশ সরকার।
এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো কারণে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে যানবাহন ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করা যাবে। আবার এসব গাড়ি এক স্টেশন দিয়ে আমদানি হয়ে ভিন্ন কোনো স্টেশন দিয়ে ফিরে গেলে সাত দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত তথ্য যানবাহনটি যে শুল্কস্টেশন দিয়ে প্রবেশ করেছিল, সে স্টেশনকে রেজিস্টার্ড ডাক ও ফ্যাক্সযোগে অবহিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্যাংক গ্যারান্টির নির্দেশনা দেয়ার আগে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস কনভেনশনের ঘোষণা অনুযায়ী ব্রিটেনের রয়েল ক্লাব অব ইউকের কাছে জামানত ফি রেখে ব্রিটিশ পাসপোর্ট বাংলাদেশে দেখিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনতে পারতেন পর্যটকরা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.