গার্মেন্টসে আগুন, পুলিশের ডিআইজিসহ নিহত ৮

মে ৯, ২০১৩

toni-garmanc-bg20130508185856ঢাকা জার্নাল:  রাজধানীর মিরপুরের বাঙলা কলেজের কাছে তুংহাই সোয়েটার তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে আট জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে বিজিএমইএ’র পরিচালক ও কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মঞ্জুর মোর্শেদ রয়েছেন।

টেকনিক্যালের নিকটবর্তী ওই কারখানায় বুধবার রাত ১১ টায় আগুন লাগে।  প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ১ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনী।

নিহতরা  হলেন-পুলিশের ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ, বিজিএমইএ’র পরিচালক ও তুংহাইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান, কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও এমডির ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহেল মোস্তফা স্বপন ও   এমডির আরেক বন্ধু এমাদুর রহমান বাদল, সৈয়দ নাসিম রেজা ও ডিআইজির দেহরক্ষী রিপন এবং তুংহাইয়ের কর্মকর্তা আসাদ ও অফিস সহকারী সাহাবুদ্দিন।

এর আগে কারাখানায় আগুনের অতিরিক্ত ধোঁয়ায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৬ জনকে। কারখানার ভেতরের সিঁড়ি থেকে দুজনকে মৃতভাবে উদ্ধার করা হয়।

জীবিতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। তুংহাইয়ের এমডি মাহবুবুরকে এ্যাপোলো হাসপাতালে, ডিআইজি মঞ্জুর মোরশেদ স্কয়ার হাসপাতালে, তুংহাইয়ের কর্মকর্তা আসাদকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ও সোহেল মোস্তফা স্বপন, এমাদুর রহমান বাদল, সৈয়দ নাসিম রেজা, রিপন, সাহাবুদ্দিনকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নেওয়া হয়।

শেরেবাংলা নগর থানার এস  আই রাজু আহমেদ ৮ জনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ডিআইজি  মঞ্জুর মোর্শেদের মরদেহ গুলশানে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাহবুবুর রহমানের মরদেহ এ্যাপোলো হাসপাতালে রয়েছে।

রিপনবাদে অন্যান্যদের মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপনের লাশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তার পরিবারের সদস্য আসলে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান রাজু আহমেদ।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম।

রাত আড়াইটার দিকে তুংহাই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার জামেদুর রহমান বলেন, “মোট সাত জন  মারা গেছেন। তারা সকলই ১০ তলায় বৈঠক করেছিলেন।”

ডিআইজি কেন এসেছিলেন প্রশ্ন করলে তিনি  জানান, “এমডির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হচ্ছেন ডিআইজি। এমডির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন।”

তিনি জানান, এমডির মরদেহ বসুন্ধরার এ্যাপোলো হাসপাতালে রয়েছে। ডিআইজির মরদেহ তার গুলশানের বাসায় নিয়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা।

পি-১৪ পাজেরো গাড়িতে করে পোশাক কারখানায় আসেন মঞ্জুর মোর্শেদ। কারখানার সামনে তার গাড়িটি ছিল। তিনি সাদা পোশাকে ছিলেন।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে মোট পাঁচজনকে আনা হয়। এদের চারজনকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। পরে বাকি একজনও মারা যায়।

১২ তলার এ কারখানার এক তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা যায়। আগুন তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছড়ায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল বাহিনী।

দমকল বাহিনীর মোট ১৩টি ইউনিট দুই ঘণ্টা যাবৎ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিভেন্সের পরিচালক(অপারেশন ও ব্যবস্থাপনা) মেজর মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, “রাত ১টার দিকে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। এখানে ১৩টি ইউনিট কাজ করেছে।”

জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারখানাটি ছুটি দেওয়া হয়। ছুটির পর কারখানার মাহবুবুর রহমান ও অন্যান্যরা কারখানায় অবস্থান করছিলেন। ১০ তলায় কার্যালয়ে তারা বৈঠক করছিলেন।

কারখানা ছুটি হলেও কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছিল। তবে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা বের হতে পারলেও এমডিসহ অন্যান্যরা বের হতে পারেন নি। কালো ধোঁয়ায় তাদের অনেকে অজ্ঞান ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার সময় অনেকে রাস্তায় মারা যান।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছে, হতাহতদের কারখানার ছয়, সাত বা ১০ তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তারা ওইসব তলার সিঁড়িতে পড়ে ছিলেন।

উদ্ধারের সময় তাদের অনেকের মুখ কালচে ছিল। প্রথমে ১২ টা ৪৯ মিনিটে মালিক মাহবুবুর রহমান ও অন্য একজনকে উদ্ধার করা হয়। এর পর দফা দফায় উদ্ধার করা হয় অন্যান্যদের।

কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন জানান, আগুন লাগার সময় ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার পরে গোডাউনে ওয়্যারলিঙ্কের কাজ চলছিল। এখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।

কারখানার এক সুপারভাইজার জানান, আগুন লাগার সময় বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক একতলা ও দোতলায় কাজ করছিল। আগুন লাগা মাত্রই তারা নিরাপদে বের হয়ে আসেন।

রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বিজিএমইএর সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। ওই সময় তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি মালিকসহ ৫ থেকে ৬ জন আটকা পড়েছেন। তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।”

‌তিনি আরও বলেন, “কারখানা বন্ধ ছিল। আগুন লাগার বিষয়টি আপাতত রহস্যজনক মনে হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখব আমরা।”

পোশাক কারাখানাটিতে আগুন লাগা ও ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান সাংবাদিকদের বলেন,“ ইলেকট্রিসিটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। পরে তদন্ত করে এই বিষয়ে পরিষ্কার একটা তথ্য দেওয়া হবে।”

ঢাকা জার্নাল,  মে ০৯, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.