যেখানে হেফাজতের ঘাঁটি, সেখানেই অভিযান

মে ৭, ২০১৩

0,,16793028_302,00ঢাকা জার্নাল: হেফাজতকে আর কোনো ছাড় দেবে না সরকার। যেখানে যেখানে হেফাজতের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে, সেখানেই অভিযান চালাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সরকার এদের ব্যাপারে কোনো নমনীয়তা দেখাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনটাই জানা গেছে।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বলে সভা শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সুপরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে হেফাজত এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটাতে পারে বলেও বৈঠকে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার হেফাজতের অবরোধের সময় রাজধানীতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার সঙ্গে জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ (চিত্র) দেখে গ্রেফতার করারও নির্দেশ দিয়েছেন বলে তারা আরো জানান।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ফুটপাতের দোকানে আগুন নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ হকারদের তালিকা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পিএসকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে যেখানে যেখানে হেফাজতের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে সেখানেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযান চালাবে। যাতে তারা আর এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাতে না পারে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

“আর যাতে তারা এ ধরনের অঘটন ঘটাতে না পারে সে জন্য বিজিবি(বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) টহল আরো বাড়ানো হবে। যেখানেই বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করবে সেখানেই দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

“যারা পরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, “বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া হেফাজতের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি জানেন না যে, হেফাজতের ভালো কোনো কাজ থাকলে তার ফল তারাই পেতো। আর খারাপ কাজ যেটা থাকবে সেটা বিরোধী দলের নেত্রীর ঘাড়ে যাবে। সেটাই হয়েছে।”

সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সন্ধ্যায় হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফি কর্মসূচি সমাপ্তের ঘোষণা দেওয়ার জন্য শাপলা চত্বরের দিকে আসার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফোন করে আরো এক দিন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। খালেদা জিয়ার অনুরোধে আহমদ শফি পলাশি থেকে ফিরে যান।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মগবাজার থেকে কাকরাইল পর্যন্ত যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে জামায়াত-শিবির, বিএনপি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিও চিত্র দেখে এদেরকে চিহ্নিত করে মামলা দিয়ে ধরা হবে।

এ কাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে আল্লামা আহমদ শফিকে গ্রেফতার করা হবে না। তিনি বয়স্ক লোক, মুরুব্বি- এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে না বলে সভায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। মাদ্রাসার অল্প বয়সী ছাত্রদের যারা সংগঠিত করে এনেছে, পরিকল্পিতভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।

এদিকে সরকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে আর কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেবে না বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়। এ জন্য সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযান সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাবেশে অল্প বয়সী যে সব ছাত্র রয়েছে তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আগে থেকেই বিশেষ নির্দেশ দিয়েছিলেন।

হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কে ছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.