গণতন্ত্রের পথে মিশর

মে ১, ২০১৩

photo_lg_egyptঢাকা জার্নাল: হোসনি মুবারকের পতনের পর মিশরে এক নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে বলে মনে হয়েছিল৷ কিন্তু সেই মিশর আজ দ্বিধাবিভক্ত, দিশাহারা৷ মিশরের গণমানুষের মনে একটাই প্রশ্ন, কোথাও যেন একটা বড় ভুল হয়ে গেছে৷

রাজনৈতিক সংঘাত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা৷ মিশর থেকে কোনো ভালো খবর পাওয়া বিরল৷ গণতান্ত্রিক রূপান্তরও যেন থমকে রয়েছে৷ নীলনদের দেশে আজ সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র৷ অথচ দু’বছর আগে হোসনি মুবারকের পতনের সময়ের সেই আশা ও প্রেরণার জোয়ারে অনেক মিশরীয়র মনে হয়েছিল, যেন নতুন এক যুগ শুরু হতে চলেছে, এমন এক নতুন দেশ, যেখানে মানুষের আরো বেশি স্বাধীনতা, আরো বেশি অধিকার থাকবে – আর থাকবে সকলের জন্য রুটি-রোজগার৷ আজ সেই আশা কুয়াশার মতোই অন্তর্হিত হয়েছে, বহু মানুষ সেই বিপ্লবকেই সব দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী করছেন৷

গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে যে দু’টি অন্তরায়ের নাম করা হয়, সেগুলি হল সামরিক বাহিনী এবং মুসলিম ব্রাদারহুড৷ বিপ্লব যে গোড়া থেকেই ভুল সিগন্যাল পেয়ে ভুল ট্র্যাকে চলে যায়, তার মূল কারণ হল এই দু’টি প্রতিষ্ঠান, বলে এমাদ গাদ’এর অভিমত৷

গাদ কায়রোর আল-আহরাম কেন্দ্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক৷ আরব বসন্ত যেখানে শুরু হয়, সেই টিউনিশিয়ার মতো প্রথমে একটি সাংবিধানিক সম্মেলন আহ্বান না করে, মিশরে সামরিক বাহিনী ও ইসলামপন্থিরা যতো শীঘ্র সম্ভব সংসদীয় নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়৷

২০১১ সালের মার্চে জনতা ঐ সামরিক বাহিনী ও ইসলামপন্থিদের ডাকে সাড়া দিয়ে গণভোটে অংশগ্রহণ করে, যার ফলে গণতন্ত্রের পথে মিশরের যাত্রা শুরু হয় কোনোরকম প্রস্তুতি বা নিয়মকানুন ছাড়াই৷ গাদ’এর সেটাই সমালোচনা: ঐ গণভোট মিশরীয় সমাজের বিভাজনকে আরো ত্বরান্বিত করেছে৷ একদিকে ইসলামপন্থি, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ: সমাজের এই মেরুকরণ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷

তুরুপের তাস

মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘‘স্বাধীনতা ও ন্যায়” দল ২০১১ সালের শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পায়৷ তার ছ’মাস পরেই মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মেদ মুরসি মিশরের প্রথম বেসামরিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন৷ মুসলিম ব্রাদারহুডের হাতে গোড়া থেকেই তুরুপের তাস ছিল – ধর্ম৷ গাদ’এর ভাষ্যে: ‘‘মিশরে ভোট পাবার সবচেয়ে সোজা পথ হল ধর্ম৷ জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নিরক্ষর৷ তাদের অনেককেই সহজে প্রভাবিত করা সম্ভব৷”

ইসলামপন্থিরা নির্বাচনে তাদের জয়কে নিজেদের নীতি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার খোলা অনুমতি বলে ধরে নিয়েছে৷ অপরদিকে বিরোধীরা সরকারের সঙ্গে সমানতালে নীতি নির্ধারণ করতে চায়, যেন ভোটের ফলাফলের কোনো তাৎপর্যই নেই৷ যা প্রমাণ করছে যে, দু’পক্ষেরই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই৷

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের জয় যাবৎ গোটা বিতর্কটা চলেছে সংবিধানে, গণমাধ্যমে কিংবা সমাজে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে৷ সেক্ষেত্রে যে সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা বিস্মৃত হয়েছে৷ দেশের জরুরি অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিও উপেক্ষিত হচ্ছে৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, বড় বড় নীতিগত বিতর্কগুলোর সাথে সাথে রাজনীতির বাকি সাদামাটা, দৈনন্দিন কর্তব্যগুলির দিকে নজর দেবার মতো সময় কারো নেই৷

‘‘ফেলুল”

অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাবার জন্য ইসলামপন্থিদের ‘‘ফেলুল”-রা আছে৷ এরা হল ক্ষমতাচ্যুত মুবারকের সমর্থক৷ তারাই নাকি গণতান্ত্রিক প্রগতির পথে নানা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করছে৷ অথচ সাবেক প্রশাসনের জ্ঞাত বা অজ্ঞাত প্রতিনিধিরা যে আজ কতোটা সক্রিয় বা প্রভাবশালী, তা কারোরই জানা নেই৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাদ গাদ’এর মতে মুবারক প্রশাসনের আসল উত্তরাধিকার হল দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ – ও সেই সঙ্গে পুলিশি নিপীড়ন৷ অপরদিকে অর্থনীতি, বিচার বিভাগ কিংবা নিরাপত্তা বিভাগে মুবারক সমর্থকরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে৷ সাধারণ মানুষদের মধ্যেও সহানুভূতির অভাব নেই: মুবারকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শাফিক গতবছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মুরসি’র বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ শতাংশ ভোট পান৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.