জার্মান অস্ত্র কিনছে কাতার

এপ্রিল ২৩, ২০১৩

German tank riders1ঢাকা জার্নাল: কাতার আমিরাত জার্মানির কাছ থেকে ট্যাংক ও হাওয়িটজার কামান কিনছে৷ জার্মান সংসদে বিরোধী দলগুলি যার বিরোধী, কেননা কাতারে গণতন্ত্র নেই বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত৷ আর অস্ত্রব্যবসায় অধিক উৎক্রোচ প্রদান করা হয়, সেকথাও যে ঠিক!

জার্মানির ক্রাউস-মাফেই ভেগমান সংস্থা সমরাস্ত্র উৎপাদন করে থাকে৷ এবার তারা কাতারের কাছ থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের একটি অর্ডার পেয়েছে৷ অর্ডার পাওয়ার আগে দু’পক্ষের পাঁচ বছর ধরে আলাপ-আলোচনা চলে৷ গত বৃহস্পতিবার মিউনিখে কেএমডাব্লিউ-এর মুখ্য কার্যালয় থেকে জানানো হয়, কাতারকে ৬২টি লিওপার্ড-দুই ট্যাংক ও ২৪টি সাঁজোয়া গাড়ি বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে৷

কেএমডাব্লিউ-এর বিবৃতি অনুযায়ী, কাতারের কাছে ফ্রান্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্মিত পুরনো ট্যাংক ও হাওয়িটজার আছে৷ আমিরাতটি এখন এই সব পুরনো অস্ত্রশস্ত্র বিদায় করে তাদের সাড়ে আট হাজার সৈন্যের সামরিক বাহিনীকে কেএমডাব্লিউ-এর সর্বাধুনিক অস্ত্রপ্রণালী দিয়ে সাজাতে চায়৷ কিন্তু সেজন্য বিশ্বের আধুনিকতম ব্যাটল ট্যাংকের প্রয়োজন পড়ে কি?

শোনা যাচ্ছে, কাতার নাকি ইরানের সঙ্গে সংঘাত বাঁধার ক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকতে চায়৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ভের্নার রুফ সে কথা বিশ্বাস করতে প্রস্তুত৷ তবে: ‘‘অস্ত্রব্যবসায় এমন একটি ব্যবসায়, যা-তে সবচেয়ে বেশি উৎক্রোচ প্রদান করা হয়৷ যারা অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তাদের পক্ষে এটা একটা ভালো উপরি আমদানির উৎস৷”

বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং কাতার বিশেষজ্ঞ হামাদি আল-আউনির মতে কাতার এই লিওপার্ড ট্যাংকগুলি দিয়ে বহির্বিশ্বে কাতারের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন গোষ্ঠীগুলিকে সাহায্য করবে৷ আল-আউনি ডিডাব্লিউকে বলেন: ‘‘এই সব অস্ত্র যে অন্য কোথাও পাঠানো হবে, সে সম্ভাবনা বাতিল করা চলে না৷ হয়ত তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায়৷ কিংবা হয়ত লেবাননে৷” তবে কাতার যে এই অস্ত্রে নিজেকে ইরানের হুমকি থেকে সুরক্ষিত করবে, আল-আউনি সেটা বিশ্বাস করেন না৷ ‘‘এই অঞ্চলে দু’টি রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ বাহরাইন হলো মার্কিন নৌঘাঁটি আর কাতার হলো মার্কিন বিমানঘাঁটি৷ এ দু’টি হলো বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ঘাঁটিগুলির মধ্যে পরিগণ্য।” ইরানের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে কাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় থাকবে৷

স্বৈরতন্ত্রে মানবাধিকার?

জার্মানির বিরোধী দলগুলি কেএমডাব্লিউ-এর অস্ত্র বিক্রয়ের সমালোচনা করেছে এই বলে যে, কাতার স্বৈরতন্ত্রের কায়দায় শাসিত এবং সেখানে নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়৷ দুই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুফ এবং আল-আউনির মতও তাই৷ কাতারে আল-জাজিরা যখন সম্প্রচার শুরু করে, তখন তার স্বাধীনতা থেকে থাকতে পারে, কিন্তু আজ তা প্রধানত বিদেশে প্রচারণার কাজে নিয়ত, বলে ভের্নার রুফের ধারণা৷ অপরদিকে কাতারে বিরোধী দল গঠনের কোনো সুযোগ নেই – আল-আউনি স্মরণ করিয়ে দেন৷ ‘‘স্বল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কাতারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ আমির ও তার আত্মীয়স্বজন এবং শাসকবর্গের কোনো সমালোচনা করা চলবে না৷” প্রাথমিক দৃষ্টিতে কাতারকে পুলিশি রাষ্ট্র বলা চলে না, কিন্তু পুলিশ-গোয়েন্দাদের নজর সর্বত্র৷

আরব বসন্তের বিপ্লবগুলিতে কাতার যদি বিদ্রোহীদের সাহায্য করে থাকে, তবে তার পিছনেও স্বার্থ কাজ করেছে, বলে আল-আউনি মনে করেন৷ কাতার নাকি ধরে নিয়েছিল যে, তিউনিশিয়া, লিবিয়া কি মিশরে বিপ্লবের পর ইসলামি শাসন কায়েম হবে৷ অর্থাৎ গণতন্ত্রকে সমর্থনের ভেক ধরে কাতার ঠিক তার উল্টোটা করতে চেয়েছে৷ ভের্নার রুফ স্মরণ করিয়ে দেন, আল-জাজিরা যখন আরব বিপ্লবের ঝান্ডা ওড়াচ্ছে, কাতার তখন বাহরাইনে ট্যাংক পাঠিয়েছে, যা-তে সৌদি আরবের নেতৃত্বে বাহরাইনে বিদ্রোহ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়৷

পশ্চিমের উদাসীনতা

পশ্চিম যে কাতারের আরো বেশি সমালোচনা করে না, তার একমাত্র কারণ, আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের একটা পুনর্গঠন চলেছে, যে পুনর্গঠনে উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি নতুন শক্তি খবরদারির ভার নেবে৷ এবং সেই শক্তি হবে সৌদি আরব ও কাতার, বলে ভের্নার রুফ মনে করেন৷ এবং এই দু’টি দেশ তাদের নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে আরব দেশগুলির ইসলামিকরণে আগ্রহী হবে৷ মিশর কিংবা তিউনিশিয়ায় ইসলামপন্থিদের সাহায্যের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ আবার সেই অর্থেই সিরিয়া থেকে মালি পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘাতের জন্য ইসলামপন্থি যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মানবাধিকার কিংবা গণতন্ত্র সম্পর্কে ভাববার সময় কোথায় বা কার?

জার্মানির ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য, বলে রুফ মনে করেন৷ জার্মানি মালিতে ইসলামপন্থিদের বিরোধী, কিন্তু গোটা ব্যাপারটার উৎস হল কাতার এবং বিশেষ করে সৌদি আরব, যেখানে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়৷ কিন্তু এই দু’টি দেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব নীরব৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে এই সেদিন সৌদি আরবকে স্থিতিশীলতার নোঙর বলে চিহ্নিত করেছেন৷ তাহলে কাতারকে সেই নোঙরের শৃঙ্খল বলা চলতে পারে৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.